আজ  শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪


চিকিৎসা সেবায় অনন্য ভূমিকা রাখছে আল-আমিন হাসপাতাল

  আফছার উদ্দিন লিটন:   |   আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ২০২২-০৩-২৩    1216

 

চিকিৎসা সেবায় অনন্য ভূমিকা রাখছে আল-আমিন হাসপাতাল

মো. ইউছুফ চৌধুরী। চট্টগ্রাম নগরীর আল-আমিন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের পাহাড়তলী থানার সভাপতি। তিনি আল-ইখওয়ান প্রপার্টি প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য। ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের রহমান নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন আবদুল আলী নগর এলাকায়। তিনি কাট্টলি নূরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ ব্যাচের একজন গর্বিত ছাত্ ছাত্র। সাক্ষাৎকারের তাঁর সাথে স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেলের বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশটুকু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টলার ডাক পত্রিকার সম্পাদক আফছার উদ্দিন লিটন।

আফছার উদ্দিন লিটন : আল-আমিন হাসপাতাল কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : ১৯৯৯ সালে আমরা সংগঠিত হলেও ২০০০ সালে আল-আমিন হাসপাতাল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।

আফছার উদ্দিন লিটন : আপনি কিভাবে আল-আমিন হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত হলেন এবং কত সাল থেকে এ হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : ১৯৯৯ সাল থেকে আমি আল-আমিন হাসপাতালে আছি। আমি এ হাসপাতালের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক। আগে চট্টগ্রামে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো ছিল-জিইসি ও চকবাজার মেডিকেল কেন্দ্রীক।  জামালখান ছিল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চেম্বার কেন্দ্রীক। আর এখনতো অনেক জায়গায় হাসপাতাল হচ্ছে। ওই সময়ে আমরা যখন দেখলাম পাহাড়তলী থেকে মিরেরসরাই পর্যন্ত ভালো হাসপাতাল নেই--এসব এলাকার মানুষগুলোর জন্য একটা বেসরকারি হাসপাতাল করা যেতে পারে। ওই চিন্তা থেকেই আমরা হাসপাতাল করি।

আফছার উদ্দিন লিটন : অত্র এলাকায় আল-আমিন হাসপাতাল গড়ার পেছনে কার ভূমিকা বেশি?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আল-আমিন হাসপাতাল গড়ার পেছনে শুধু আমি নয়-আমার পাশাপাশি আরও অনেকের ভূমিকা ছিল। যা না বললে নয়-তার মধ্যে মো.আলহাজ্ব নুরুল আলম, ডা. মো. শাহদাত হোসাইন, আলহাজ্ব এসএম নুরুন্নবী ও মো. ফখরুল আলমের নাম উল্লেযোগ্য।

আফছার উদ্দিন লিটন : আপনার হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার মান সম্পর্কে জানতে চাই-----

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আমাদের হাসপাতালে রোগীদের আন্তরিকতার সহিত মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

 আফছার উদ্দিন লিটন : আপনার হাসপাতালে কি কি ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়?


মো. ইউছুফ চৌধুরী : আল-আমিন মেটারনিটি সেন্টারের সুবিধা : তুলনামূলক কম খরচে নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়। আল-আমিন ট্রমা কেয়ার : আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটারে সকল প্রকার হাড়ভাঙ্গা রোগীর যাবতীয় অপারেশন বিশিষ্ট অর্থোপেডিক্স সার্জন দ্বারা কম খরচে করা হয়। আল-আমিন বার্ন কেয়ার : অগ্নিদগ্ধ রোগীদের বিশেষ যত্নযতœসহকারে অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা কম খরচে চিকিৎসা করা হয়। ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার সুবিধা : মাত্র ১৫০ টাকা ফি দিয়ে ২৪ ঘণ্টা অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা (রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফি ২০০ টাকা) রয়েছে। সার্বক্ষনিক ল্যাব সেবা : অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান দ্বারা সার্বক্ষনিক এক্সরে, প্যাথলজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। মহিলা আল্ট্রাসনোগ্রাফী-মহিলা ডাক্তার দ্বারা করা হয়। ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি সুবিধা : দিবা রাত্রি ২৪ ঘণ্টা যে কোন ইমার্জেন্সি স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমাদের অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার, সু প্রশিক্ষিত স্টাফ ও প্রয়োজন মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আপনাদের সেবায় সদা প্রস্তুত থাকে। অত্যাধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ ৩টি অপারেশন থিয়েটার: অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ৩টি  অপারেশন থিয়েটারে গাইনি, হাড়ভাঙ্গা, জেনারেল সার্জারি ও খতনাসহ যাবতীয় অপারেশন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা তুলনামূলক কম খরচে করা হয়। ল্যাপারোস্কপি অপারেশনের সুবিধা : পেট না কেটে ল্যাপারোস্কপি মেশিনের সাহায্যে পিত্তথলির পাথর, এপেন্ডিসাইটিস, ওভারিয়ানসিস্ট ও অন্যান্য অপারেশন করা হয়।
আল-আমিন হাসপাতালের একটা বিশেষত্ব হলো-ল্যাবের পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমরা মানটা সর্বোচ্চভাবে রক্ষা করি।
আমাদের হাসপাতালে যে ফার্মেসি রয়েছে-ওই ফার্মেসির একটা বিশেষ গুণ হলো তা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।
আমাদের ইনডোর, আউটডোর সার্ভিস রয়েছে। মাত্র ১৫০ টাকার ফিতে অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার দেখানোর সু ব্যবস্থা রয়েছে। আল-আমিন ফিজিওথেরাপি সেন্টারে  রোগীদের থেরাপি প্রদান নিশ্চিত করা হয়Ñঅভিজ্ঞ থেরাপিস্ট দ্বারা। এ ছাড়া থেরাপি সেন্টারে রয়েছে-বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার। যাতে অত্র এলাকার মানুষ সহজে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারে।                                                                             
আফছার উদ্দিন লিটন : আপনার হাসপাতালে এলাকার লোকজন চিকিৎসা সেবা কেমন পাচ্ছেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : অত্র এলাকার রোগীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বিশেষ করে চিকিৎসা সেবা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত-এমন গরিব অসহায় রোগীদের আমরা সহায়তা করি।

আফছার উদ্দিন লিটন : আগে আমরা দেখতামÑআল আমিন হাসপাতালে সীতাকুণ্ড এবং মিরেরসরাই অঞ্চল থেকে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসতো; বর্তমানে এ ধারা অব্যাহত আছে কিনা?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : হ্যা, এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। আমরা সীতাকুণ্ড, মিরেরসরাই এবং নগরীর পাহাড়তলী, আকবরশাহ ও হালিশহর এলাকায় গরিব রোগীদের সুবিধার্থে খৎনা ক্যাম্প, সাধারণ চিকিৎসা ক্যাম্প, ব্লাড গ্রুপিং, ডায়াবেটিস পরীক্ষা সহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

আফছার উদ্দিন লিটন : এলাকার দরিদ্র রোগীদের জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো ছাড় রয়েছে কিনা?


মো. ইউছুফ চৌধুরী : আগেই বলেছি আমাদের হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে।

আফছার উদ্দিন লিটন : ব্যাঙের ছাতার মতো শুধু চট্টগ্রাম নয়-সারা দেশে প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগীরা কি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারী থাকলে যত্রতত্র অননুমোদিত প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা ক্লিনিক করার সুযোগ পাবে না। সরকারের নিয়মিত তদারকির অভাবে যে কেউ অনুমোদনবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে দিচ্ছে। এতে রোগীরা নির্ভুল রোগ নির্ণয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুল রিপোর্টের কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এক্ষেত্রে সরকারে নজরদারি বাড়াতে হবে এবং কেউ যাতে অনুমোদন ছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলতে না পারে বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

আফছার উদ্দিন লিটন : করোনাকালীন অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ ছিল। আপনার হাসপাতালে তো এ সময় কোনো সমস্যা হয়নি?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আমরা করোনাকালে ১ মিনিটের জন্যও হাসপাতাল বন্ধ রাখিনি। স্টাফদের করোনা সুরুক্ষা সামগ্রী দিয়ে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় সাধারণত: সর্দি, জ¦র, কাশি আছে এমন রোগীগুলো আমাদের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে এখনো হচ্ছে।

আফছার উদ্দিন লিটন : করোনার সময় আপনার হাসপাতালের নার্স-স্টাফদের কি ধরনের সুরক্ষা দিয়েছেন?


মো. ইউছুফ চৌধুরী : প্রথমত: কোনো নার্স-স্টাফদের আমাদের হাসপাতাল থেকে ছাটাই করা হয়নি। তাদেরকে করোনার স্বাস্থ্য-সুরুক্ষা সামগ্রী হাসপাতাল থেকে প্রদান করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার জন্য গাড়ির সুবিধা দেয়া হয়।

আফছার উদ্দিন লিটন : করোনাকালে আপনাদের হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড ছিলো কিনা?
মো. ইউছুফ চৌধুরী :
করোনাকালে আমাদের হাসপাতালে কোনো করোনা ওয়ার্ড ছিলো না। তবে যারা করোনার উপসর্গ নিয়ে আসতো-তাদেরকে আমাদের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো। পাশাপাশি হাসপাতালের অন্যান্য নিয়মিত চিকিৎসা সেবা অব্যাহত ছিল। ওই সময় গাইনি ডাক্তার ও অভিজ্ঞ নার্সরা ডেলিভারি রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আফছার উদ্দিন লিটন : একটি প্রাইভেট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি আর সরকারি কোন সংস্থার অনুমোদন নিতে হয়?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : একটি প্রাইভেট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রথমত: ওই হাসপাতালটি সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভা আওতার এলাকা হলে সরকারি ওই সংস্থা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। দ্বিতীয়ত: ওই হাসপাতালটি লিমিটেড কোম্পানি করতে হলে জয়েন্টস্টকের অনুমোদন নিতে হবে। তৃতীয়ত: ঢাকা মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতাল পরিচালনা ও হাসপাতালের রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য অনুমোদন নিতে হবে। চতুর্থত: এক্সরের জন্য আনবিক শক্তি কমিশন থেকে নিতে হবে অনুমোদন। পঞ্চমত: হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার জন্য নিতে হবে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর থেকে ফায়ার লাইসেন্স। ষষ্ঠত: মেডিকেল বর্জ্যরে জন্য নিতে হবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন। এরপর ইনকাম ট্যাক্স অফিসের অধীনে টিন এবং ভ্যাট অফিসের অধীনে বিন সনদের অনুমোদন নিতে হবে।

আফছার উদ্দিন লিটন : আপনাদের হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা কেমন? এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো নির্দেশনা আছে কিনা?
মো. ইউছুফ চৌধুরী :
আমাদের হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক সর্ম্পূণ স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়। আমাদের হাসপাতালে ক্যাটাগরি অনুযায়ী তিন ধরনের বিন রয়েছে। সাধারণ বর্জ্যগুলো আলাদা করে সাধারণ বিনে রাখা হয়। তুলা, ব্যান্ডেজ ওই বর্জ্যগুলো আলাদা করে তুলা, ব্যান্ডেজ বিনে রাখা হয়। সুই জাতীয় বর্জ্যগুলো আলাদা করে ধ্বংস করার মাধ্যমে সুই জাতীয় বিনে রাখা হয়। প্রতিদিন ভোর সকালে নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত বেসরকারি সেবা সংস্থা আমাদের হাসপাতালের নির্ধারিত বিন থেকে বর্জ্যগুলো নিয়ে চসিকের নির্ধারিত জায়গায় ফেলে দেয়।

আফছার উদ্দিন লিটন : বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতালগুলো ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্রায় সময় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। এক্ষেত্রে হাসপাতাল মালিক ও ডাক্তারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কি বলবেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : এক্ষেত্রে হাসপাতালের মালিক ও ডাক্তারদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। পারতপক্ষে কোনো ডাক্তার চিকিৎসা সেবায় অবহেলা করে না। একজন ডাক্তার কখনো রোগীর মৃত্যু কামনা করে না। তিনি একজন রোগীকে বাঁচানোর জন্য মন-প্রাণ আন্তরিকতা দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। প্রত্যেকেই তার সুনাম রক্ষা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে। তবে, মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে  রোগী মৃত্যুবরণ করার খবর সংবাদপত্রগুলোতে দেখি-যা আমাদেরকে হতাশ করে।

আফছার উদ্দিন লিটন : প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় গরীব অসহায় রোগীরা টাকার অভাবে ছাড়পত্র পায়না এমনকি লাশ পর্যন্ত রেখে দেয়া হয়? এক্ষেত্রে আপনাদের হাসপাতাল কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আমাদের হাসপাতালে রোগী এবং তার পরিবারের সাথে এমন আচরণ কেউ করে না। অন্য হাসপাতাল করে কিনা তা আমি বলতে পারি না। আমাদের হাসপাতালে গরিব অসহায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা নেয়াকালীন সময়ে যদি আর্থিক সঙ্গত কারণে বিল পরিপূর্ণ পরিশোধ করতে না পারলে-আমরা তাদেরকে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকি।

আফছার উদ্দিন লিটন : আমরা দেখেছি-১৫-২০ বছর আগে গর্ভবতী রোগীদের প্রাইভেট এবং সরকারি হাসপাতালে সিজার করতে হতো না; তা অনায়াসে নরমাল ডেলিভারি হয়ে যেতো। এখন গর্ভবতী রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সিজার দিতে উৎসাহিত হন, খুব কম ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হয়। এর কারণ কী?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : বিষয়টি আমাদের ক্ষেত্রে সত্য নয়। আমাদের হাসপাতালে এখনো অধিকাংশ রোগীর নরমাল ডেলিভারি করা হয়।

আফছার উদ্দিন লিটন : চিকিৎসা সেবা একটি সেবামূলক কাজ। কিন্তু বাংলাদেশের ডাক্তারদের ক্ষেত্রে দেখা যায়-বিশেষ করে ডাক্তার একটু পপুলার হলে রোগীর সাথে ঠিক মতো কথা বলেন না। এ অভিযোগ কতোটা সঠিক?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : যারা রোগীদের সাথে এমন আচরণ করে-তা করা মোটেও উচিৎ নয়। সবক্ষেত্রে রোগীদের সাথে সর্বোচ্চ আন্তরিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারদের রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার-রোগী সুস্থতার জন্য ভালো ভূমিকা রাখে। উন্নত বিশ্বের ডাক্তার রোগীদের সাথে কি ধরনের আচরণ করে তা আমাদের ডাক্তাদের অনুসরণ করা উচিত।

আফছার উদ্দিন লিটন : বর্তমানের চিকিৎসকরা অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক হয়ে গেছেন। এতে দিন দিন বেড়েই চলেছে তাদের চিকিৎসা ফি। এতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তরা। ফি-এর ক্ষেত্রে সরকার কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে কিনা?
মো. ইউছুফ চৌধুরী : দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের আয়ের চেয়ে এখন ব্যায় বেড়ে যাওয়ায় তারা অনেক সময় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের কোনো মানুষ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করুক তা আমরা চাইনা। তাই এ বিষয়ে সর্বদিক বিবেচনা করে সরকার চাইলে নীতিমালা তৈরি করতে পারে। এতে রাষ্ট্রের সকল পক্ষের নাগরিক উপকৃত হবে।

আফছার উদ্দিন লিটন : এবার একটু মানবাধিকার প্রসঙ্গে যেতে চাই-দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কি বলবেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আমার মতে, বর্তমানে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য সকল পক্ষকে একসাথে কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।


আফছার উদ্দিন লিটন : নাম সর্বস্ব মানবাধিকার সংগঠনে যাদেরকে সদস্য হিসেবে নেয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশ যোগ্যহীন। যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবই সীমিত। আইন সর্ম্পকে নেই কোনো ধারণা। একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?  
মো. ইউছুফ চৌধুরী :
এটা মোটেও সমীচিন নয়। মানবাধিকার কর্মী হতে হলে তাকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। কারণ, মানবাধিকার কর্মীদের মানবাধিকার আইন সর্ম্পকে অবগত থাকতে হবে। স্বচ্ছ, সচেতন মানুষগুলো মানবাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় হওয়া উচিৎ।


আফছার উদ্দিন লিটন : নাম সর্বস্ব মানবাধিকার সংগঠনে অসহায় মানুষদের মানবাধিকার সেবা দেয়ার পরিবর্তে হয়রানি করে থাকে। এ নিয়ে কি বলবেন?
মো. ইউছুফ চৌধুরী :
এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ ও প্রশাসন সচেতন হলে এবং সত্যিকার মানবাধিকার সংগঠনগুলো সচেতন, সক্রিয় হলে তাদের হীনস্বার্থ হীন তৎপরতা রোধ করা সম্ভব। গরীব অসহায় মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মানবাধিকার সেবা না দিয়ে হয়রানি করা উচিত নয়। যারা অসহায় মানুষের সাথে এমন আচরণ করে তারা মানুষের কোনো পর্যায়ে পড়ে না।

আফছার উদ্দিন লিটন : অভিযোগ রয়েছে অযোগ্য মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে যাকে তাকে ক্রেস্ট দিয়ে দিচ্ছেন। অথচ তারা ক্রেস্ট পাওয়ার যোগ্য নয়। এমন কি সমাজে এদের গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। এর কারণ কী?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : যারা এ ধরনের কাজ করে তারা একেবারেই নিন্দনীয়। তা অতিসত্ত্বর বন্ধ হওয়া উচিৎ। যোগ্য, গুণী এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের ক্রেস্ট দেয়া উচিত। কোনোমতে মাদক ব্যবসায়ী, নারী পাচারকারী, খাদ্যে ভেজালকারি, খাদ্য মজুদকারী, কালোবাজারী ও ভূমিদস্যুদের ক্রেস্ট দেয়া উচিত নয়। তাই যাকে-তাকে ক্রেস্ট দেয়া পরিহার করতে হবে।

আফছার উদ্দিন লিটন : যাকে তাকে এরা ক্রেস্ট দিয়ে মেধাবীদের যেমন অসম্মানিত করছেন, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনছেন। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : এ বিষয়ে আমার বলার ভাষা নেই। এটা সম্পূর্ণ নৈতিকতা বহির্ভূত কাজ। শিক্ষিত, মেধাবীদের ক্রেস্ট দিয়ে মূল্যায়ন করলে তারা দেশ ও জাতির জন্য ভালো কিছু করবে। অন্যদিকে অসৎ মানুষ এবং দুর্নীতিবাজদের ক্রেস্ট দিলে তারা আরও সমাজবিরোধী কাজ করতে উৎসাহিত হবে। তাদের ক্রেস্ট দিলে রাষ্ট্রের ক্ষতি ছাড়া কোনো কল্যাণ হবে না। তাই আর নয় ক্রেস্ট বাণিজ্য। তাই শিক্ষিত, মেধাবীদের তাদের স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে ক্রেস্ট দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত।

আফছার উদ্দিন লিটন : শহরের সর্বত্র দেখা যায় মানবাধিকার সাইনবোর্ড। দেশে আসলে কতটি মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে এবং আসল মানবাধিকার সংগঠন কোনটি?
 
মো. ইউছুফ চৌধুরী : বিগত কয়েক বছর ধরে যত্রতত্র স্থানে ভুঁইফোঁর মানবাধিকার সংগঠন বেড়ে গেছে। এর কারণ অনেক মানহীন মানবাধিকার সংগঠন প্রকৃত মানবাধিকার সেবা না দিয়ে ধান্ধাবাজিতে মেতে উঠেছে। এসব মানবাধিকার সংগঠন টাকার বিনিময়ে যেনতেন ব্যক্তিকে ভিজিটিং কার্ড ও আইডি কার্ড দিচ্ছে। আর তারা ওই কার্ড নিয়ে পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি অফিসে যাচ্ছে। দেশে আসলে কতটি মানবাধিকার সংগঠন আছে এর সঠিক পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। আইনজীবী, শিক্ষক, উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি, উচ্চশিক্ষিত সাংবাদিক, স্বচ্ছ সু নাগরিক, সমাজ সচেতন ব্যক্তি-যাদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের রাখা উচিৎ।

আফছার উদ্দিন লিটন : আমি জানি আপনি একজন বই প্রেমিক। দেশে-বিদেশে আপনার প্রিয় লেখক কে এবং আপনি কোন ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন?

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আমি মোটিভেশনাল, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বই পড়ি। পাশাপাশি আধ্যাত্মিক বই পড়ি। এক্ষেত্রে আমি সুনির্দিষ্ট লেখকের নাম উল্লেখ করাটা সমীচিন মনে করছি না।

আফছার উদ্দিন লিটন : আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মো. ইউছুফ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার এবং আপনার পত্রিকার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। আমাদের এলাকার একজন সন্তান হিসেবে লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় আপনি যে ভূমিকা রাখছেন-তার জন্য আমরা গর্বিত। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ। আপনার জন্য দোয়া থাকলো।

#######

রিলেটেড নিউজ

তরুণ প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ‌‌প্রশিক্ষণ কর্মশালার সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন

চট্টলার ডাক ডেস্ক: তরুণ প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ‌‌'সৃজনশীল প্রকাশনা খাত: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা' শীর্�...বিস্তারিত


মুসা (আ.) এর আমলে দীর্ঘদিন বৃষ্টি বন্ধ ছিলো!

মো. ইউছুফ চৌধুরী হযরত মুসা (আ.) এর আমলে দীর্ঘদিন যাবত বৃষ্টি বন্ধ ছিলো। তাঁর উম্মতরা তাঁর কাছে এসে বললো “ হে নবী, আল্�...বিস্তারিত


আল-আমিন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড

চট্টলার ডাক ডেস্ক: আল-আমিন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড ৮৩০, জাকির হোসেন রোড, একে খান মোড়, উত্তর পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। ...বিস্তারিত


চট্টগ্রামের একে খান মোড়ে রাজমহল রেস্তোরাঁ এন্ড বেকার্সের উদ্বোধন

চট্টলার ডাক ডেস্ক: নগরীর একে খান মোড়ে সুপার রাজমহল রেস্তোরাঁ এন্ড বেকার্সের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছ। সোমবার, ২৯ �...বিস্তারিত


আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি

আফছার উদ্দিন লিটন: অধ্যক্ষ শামসুদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধ...বিস্তারিত


ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমরা পদে পদে টের পাচ্ছি

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক লায়ন একে জাহেদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র। অত্যন্ত বিনয়ী এবং সাংস্কৃতিকবান্ধব এ�...বিস্তারিত