শিরোনাম
মিনহাজ বেগম | আপডেট: ০৪:১৩ পিএম, ২০২১-১০-০৯ 889
পড়ুয়া ও ভদ্রজাতি হিসেবে জগৎজুড়ে রুশদের সুনাম আছে। চেকভ, তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, গোর্কি, পুশকিন, তুর্গেনিভ, বরিস পেত্রারনাক, মিখাইল বাখতিন আরও কত নাম! রাশিয়ানরা বিশ্বাস করে, সম্পদ বা নেতার জন্য নয়, লেখকদের জন্য রাশিয়াকে পৃথিবী চেনে। তাই ‘ভালো পাঠক’ বলে গর্ব করে তারা। রাশিয়ার সমাজে একটি ‘মিথ’ প্রচলিত আছে এবং সেটি হলো, ‘পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া রাশিয়াতে বাস করে’।
তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সেন্ট পিটার্সবার্গের রাস্তায় হঠাৎ যেন অগ্নিকু-ের আলো ও উত্তাপ পেলাম। থমকে দাঁড়িয়ে দেখি গ্রন্থহৃদয় ঝুলছে। এমনটি আগে কোথাও, কখনো দেখিনি। তরুণ-তরুণীদের কাছে ‘হার্ট’-এর প্রতীক বেশ আকর্ষণীয় নিশ্চয়। কত কিছু দিয়েই-না এটি করা যায়, আঁকা যায়। এমনকি ক্ষুদ্রতরের চিহ্ন (<) আর ৩ পাশাপাশি বসালেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হৃদয় তৈরি হয় ফোনে বা কম্পিউটারে। কিন্তু আমি দেখলাম একটি দোকানে গোটা প্রথম পাড়ি দেন খু। ২০০৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার সময়ই জেদিদিহ ফ্রান্সিস নামে এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয় তার। ফ্রান্সিসের জন্ম ক্যারিবীয় অঞ্চলে। পেমব্রোক কলেজের ডেটা বিষয়ক গবেষক তিনি। আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্ক গভীর হয়। ফ্রান্সিসকে ভালোবেসে ফেলেন খু। কিন্তু কোটিপতি বাবা যে এই সম্পর্ক মানবেন না তা বেশ ভালো করেই টের পাচ্ছিলেন খু। তা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্কের কথা বাবাকে জানান তিনি। মেয়ের ওপর ভীষণ চটে যান খুর বাবা। সোজাসাপ্টা না করে দেন বিয়েতে। খুর সামনে দুটি রাস্তা খোলা ছিল। এক, ফ্রান্সিসকে ভুলে যাওয়া আর দুই, বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিয়ে করা। কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে যাওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। কারণ সে ক্ষেত্রে বিসর্জন দিতে হতো তার এতদিনের অভ্যাসকে। বিসর্জন দিতে হতো তার বিলাসবহুল জীবন। খু তাই করলেন। ফ্রান্সিসের ভালোবাসার সঙ্গে যে আর কোনো সম্পদের তুলনা করা যায় না, সেটা বুঝিয়ে দিলেন। প্রাসাদ, সম্পত্তি সমস্ত ছেড়ে হাত ধরে নিলেন ফ্রান্সিসের। সম্প্রতি তারা বিয়ে করেছেন। বন্ধু-বান্ধবসহ মোট ৩০ জনকে নিয়ে পেমব্রোক কলেজ ক্যাম্পাসেই এই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।
গোটা সব বই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিরাট গ্রন্থহৃদয় বা বুকহার্ট। দোকানের নাম: ‘ভুক্বন’, বাংলায় ‘অক্ষর’। পাশেই রুশ ভাষায় যা লেখা রয়েছে তার বাংলা মানে-‘শরৎকাল পড়ার জন্য’। চার ঋতুর রাশিয়ায় আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর হলো শরৎকাল। তখন শরৎ চলছিল।
অক্টোবরের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত রাশিয়ার দুটি প্রধান শহর মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে ঘুরে আমার মনে হয়েছে, ‘সবচেয়ে বেশি’ নয়, ‘সবচেয়ে বেশিরও একটু বেশি’। দূরপাল্লার বাসে বা ট্রেনে কারও হাতে বই থাকতে পারে কিন্তু লোকাল বাসে দাঁড়িয়ে কেউ বই পড়ে? মেট্রোরেলে? রাশিয়ায় পড়ে। এমন একজন-দুজন নয়, শত শত। মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটারের বেশি। দ্রুতগামী বুলেট ট্রেনে ঘণ্টা চারেক সময় লাগে। আমি বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মস্কো থেকে ট্রেনে উঠলাম। কিছুক্ষণ পরই মনে হলো ট্রেনের কামরায় যাত্রীদের মধ্যে যেন ‘পড়া প্রতিযোগিতা’ শুরু হয়ে গেছে! যে যার মতো পড়ছে। কোনো হইহুল্লোড় নেই। নেই ফেরিওয়ালার হাঁকডাক। পাশের আসনে বসা যাত্রী সেভেৎলাভার সঙ্গে আলাপের শব্দও যেন আমারই কাছে বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছিল। কারণ, দীর্ঘ কথোপকথন বা উচ্চকণ্ঠে মুঠোফোনের আলাপ সেখানে নেই। দ্রুতগামী ট্রেনও বিমানের মতো সামান্য শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া কিছু করছে না। ট্রেনে যাত্রীদের হাতে কাগজের বই দেখেছি ঠিক, পত্রিকাও আছে। কিন্তু কারও কারও হাতে ট্যাব বা মোবাইল ফোনও। সন্দেহ হলো। প্রক্ষালনকক্ষে যাওয়ার ছুতোয় দুবার আসন থেকে উঠলাম। পরে আমি নিশ্চিত হয়েছি, মুঠোফোন বা ট্যাবেও বই বা পড়ার বিষয়েই তাদের মনোযোগ-ফেসবুক বা ইউটিউবে নয়। অনেকে অবশ্য ইয়ারফোন লাগিয়ে ট্রেনের টেলিভিশন বা অডিও গান শুনছিলেন। গান শুনে শুনে বই পড়ার দৃষ্টান্ত রাশিয়ার পথে পথে।
অন্য দিন, মস্কোর মেট্রোরেলে চড়ে যাচ্ছি ক্রেমলিনে, রুশ বিপ্লবের মহানায়ক ভ.ই.লেনিনের মমি দেখব বলে। মেট্রোরেলে এক যুবক ইয়ারফোন লাগিয়ে হাতে ঢাউস বই নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। ফেরার সময় হালকা বৃষ্টি। মেট্রোরেলে ছাতা গুটিয়ে নিয়ে দুই যুবতী বান্ধবী বই পড়ছিল আর আলাপ করছিল। অভ্যন্তরীণ বিমানে বয়স্ক থেকে শুরু করে তরুণদের প্রায় সবাই যেন বইয়ে বুঁদ! তরুণেরা হয়তো মুঠোফোনে বা ট্যাবে আর বয়স্করা আদি-অকৃত্রিম কাগজের বইয়ে।
২০০৮ সালে রাশিয়ায় বই নিয়ে জরিপ হয় এবং তাতে দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ মানুষ নিষ্ঠার সঙ্গে বই পড়েন; ৪০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত বই কেনেন; ৭০ শতাংশ পরিবারে ব্যক্তিগত পাঠাগার আছে। তবে এখন নাকি পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে বই সংগ্রহ করে পাঠ ও তারপর ফেরত দেওয়ার চিরায়ত চিত্রটি আর নেই, কমে গেছে। হতে পারে। ইন্টারনেটে বলে দিলেই বই যেখানে ঘরে চলে আসে বা ই-বুক মেলে হাতের ট্যাবে, কারণ এটি হতে পারে। তবে, পৃথিবীর বড় ও সেরা দশটি লাইব্রেরির দুটোর অবস্থান রাশিয়ায়। এর একটি মস্কোর ‘রাশিয়ান স্টেট লাইব্রেরি’ আর অন্যটি সেন্ট পিটার্সবার্গের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব রাশিয়া’।
২০০৭ সালকে রাশিয়াতে ‘অধ্যয়নবর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছিল। সে বছর বই প্রকাশ-বিক্রি-পাঠ ছিল রেকর্ড পরিমাণে। রুশরা চায়, দুই বছরের মধ্যেই আবার ‘অধ্যয়নবর্ষ’ ঘোষিত হোক। প্রতি বারো বছরে একটি বছর তারা বইয়ের জন্য দিতে চায়। পড়াকে রুশরা জীবন থেকে আলাদা করে দেখে না। ভাবে না, পড়ার কোনো সময় আছে কিংবা পড়ার কোনো স্থান বা বয়স আছে। বরং তারা ভাবে, সব সময়ই পড়ার, পড়লেই হলো। তাই পার্কে বসেও তারা বই পড়ে, বাসে বসেও। এমনকি প্রক্ষালনগৃহেও বই রাখার ছোট তাক থাকে।
আমরা কিছু বইকে ‘পাঠ্যবই’ নাম দিয়ে প্রকারান্তরে অন্য বইগুলোকে ‘অপাঠ্য বই’ বলি। রুশদের কাছে ‘পাঠ্যবই’ বলে আলাদা কিছু নেই, সব বই-ই পাঠ্য। যার যেটা ভালো লাগে, যতটুকু ভালো লাগে। যেকোনো বই পুরো শেষ করতেই হবে, এটা সাধারণ মানুষ মনে করে না। অনেক বই আছে যেগুলো অল্প পড়েই তারা রস গ্রহণ করতে পারে। এই যোগ্যতা অর্জনও বেশি বই পড়ার কারণেই হয়েছে। বই তারা পাঠ করে জীবনকে বুঝবার জন্য, জীবনকে সুন্দরভাবে উদ্যাপন করবার জন্য। স্কুল-কলেজের বইয়ের ভার ও ভয়ে কাবু হতে হয় না তাদের। ভ্রমণ ব্যাগে তো থাকবেই-অফিসের ব্যাগেও টিফিন, পানি, ছাতার সঙ্গে একটি বই থাকবে না, এটা অবিশ্বাস্য।
কী বই তারা পড়ে? শুধুই কি গল্প-উপন্যাস? না। কেউ খেলাধুলার, কেউ ফ্যাশনের, কেউ জাদুর, কেউ বিজ্ঞানের, কেউ শরীরচর্চার, কেউ দর্শনের, কেউ লাইফস্টাইলের, কেউ পড়ে চিরায়ত বই। কর্মজীবীরা নিজের কাজে আরও পারদর্শী হওয়ার জন্য, উন্নতি করার জন্য বই পড়ে। আমরা কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়লে ভাবি, পড়া শেষ! রুশরা ভাবে, নতুন ক্ষেত্রের পড়া শুরু। পড়ার এই অভ্যাসটি গড়ে ওঠে বলেই কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেও পড়ার জীবন থেকে তাদের অবসর হয় না-জীবনটা চলমানই থাকে, থাকে গতিশীল।
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যে শব্দ গুলো প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি পদ্ধতি ০ ওজন হ্রাস করুন। ০ দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। ০ দৈনিক ৩০ ম�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে না আনলে লিভারে...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: হঠাৎ হার্ট এটার্ক হলে বাঁচবেন কিভাবে? মনে করুন, সন্ধ্যা ছয়টার সময় একা একা বাড়িতে বসে আছেন। বাসার মা�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: মাদকাসক্তি, যৌন নিপীড়নের শিকার আর স্কুলে সহপাঠীদের বেদম মার খাওয়া- চেস্টার বেনিংটনের গল্পের শুরু�...বিস্তারিত
আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak