শিরোনাম
আফছার উদ্দিন লিটন: | আপডেট: ০৬:৪৬ এএম, ২০২১-০৮-১১ 641
করোনার থাবায় বিপর্যস্ত দেশগুলো অনেক আগেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। আর এ পিছিয়ে থাকার কারণও রয়েছে-ঘরোয়া অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং টিকা নিয়ে বৈশি^ক রাজনীতি। করোনার টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে রয়েছে; তারাই আগে ঘুরে দাঁড়াবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ডের এস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েও হয়েছে অনেক নাটক ও রাজনীতি। দেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ করোনার প্রথম ডোজ অক্সফোর্ডের এস্ট্রোজেনেকার টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সামনে আসে নানা বাধা বিপত্তি আর নাটক। ফলে অনেকেই করোনার দ্বিতীয় ডোজ নির্ধারিত সময়ে দিতে পারেনি। দীর্ঘদিন টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। কারণ করোনার টিকার ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ যে কোম্পানির দেয়া হবে, দ্বিতীয় ডোজও একই কোম্পানির হতে হবে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী এস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কথা থাকলেও ভারত তা দেয়নি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভারত চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে মামলাও করবে বলেছিল। টিকা নিয়ে ভারতের মন্তব্য ছিল তাদের দেশের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দুই লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। এ পর্যন্ত ভারতে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। তাই তারা এ দু:সময়ে টিকা দিতে পারবে না। তাছাড়া সাড়াজাগানো রাশিয়ার টিকা ‘স্পুতনিক-ভি’ এর কোনো খবর নেই। এ টিকা পেলে বাংলাদেশের টিকার সংকট অনেকটা মিটে যাবে। তবে, করোনা মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা এবং ভুটান ঈর্ষনীয় সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে। যে চীনের উহান শহর থেকে করোনার উৎপত্তি হয়েছিল সেখানে করোনার একদম নিয়ন্ত্রণে। নেই বললেই চলে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন শুধু ইউরোপ, আমেরিকা নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে চলে এসেছে। ভ্যাকসিন চলে আসাতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি আক্রান্তের হারও কমেছে। আমাদের মত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দেশে ঘুরে দাঁড়ানোর সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে আফসোস করতে হবে দীর্ঘকাল।
দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কা। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো করোনায় দেশে মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। ওই দিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। করোনার নতুন নতুন স্ট্রেইন আসাতে এ সমস্যা হয়েছে। যে কারণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারত ও ব্রাজিলকে লন্ডভন্ড কওে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এ দুটি দেশে মৃত্যুর হার ও আক্রান্তের হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ২৯ জুলাই পর্যন্ত ভারতে ২৪ ঘন্টায় করোনায় সংক্রমণের হার ছিল ২.৫২ শতাংশ। মৃত্যুর হার ছিল ১.৩৪ শতাংশ। শুধু তাই নয়। ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা এখন পর্যন্ত ১৩২টি দেশে ছড়িয়েছে। করোনায় দেশে এখন রোগী শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। মাস্ক না পড়া, সামাজিক দুরত্ব মেনে না চলা। রাজনৈতিক জনসমাবেশ এড়িয়ে না চলা। দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে উপচেপড়া মানুষের ভিড় এবং ঘন ঘন হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারণে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের মাঝে আঘাত হেনেছে। সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকার তার সেবার পরিধি বাড়াচ্ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার বাইরে আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা প্রতিবেশী দেশ ভারত কিংবা পাকিস্তান, এমনকি নেপালের চেয়েও অনেক কম। বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ লোকের জন্য রয়েছে শূন্য দশমিক সাতটি বেড, যেখানে ভারতে এই সংখ্যা দুই দশমিক তিন। আর উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে হতাশা শুধুই বাড়বে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দেখা যায়, জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের আইসিইউ বেডের সংখ্যা ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা মিয়ানমারের চেয়ে কম।
৩০ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় সারাবিশে^ আক্রান্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ৪২ লাখ ২০ হাজার ৩৪৭ জন। বাংলাদেশে ৩০ জুলাই শুক্রবার শুধু একদিনে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬২ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ২১২ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে শনাক্তের হার ৩০.৭৭ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৬৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে আক্রান্ত হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার ১১৫ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ২০ হাজার ৪৬৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৪ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৭৮১ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৫৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৭৪ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৮৩ জন। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৮৪২ জন। ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬৯ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬২৬জন। ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৯জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৭ জন। স্পেনে আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছে ৮১ হাজার ৪৮৬জন। ২৫ জুলাই রবিবার ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রকাশিত এক সংবাদে জানলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাছাড়া ২ আগস্ট থেকে শহরে এবং ৭ আগস্ট থেকে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে। তবে ষাটার্ধো বয়স্কদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা-তাঁরা টিকা কেন্দ্রগুলোতে এনআইডি কার্ড নিয়ে গেলে টিকা দিতে পারবে। শুধু তাই নয়-বয়স্কদের মধ্যে যাদের এনআইডি কার্ড নেই তারাও বিশেষ সুবিধায় টিকা দিতে পারবে। সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ৭৫ ভাগই গ্রামের। তাদের বেশিরভাগই টিকা নেননি। যারা ভেবেছিল করোনা শুধু বড় লোকের রোগ, গরিবদের নয়। এ ধারনাও ভুল হতে চলেছে। করোনা এখন গ্রামে পৌঁছে গরিবদের আক্রান্ত করছে।
সারাবিশ্বের মানুষ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বিগ্ন ও অস্বস্থিতে ছিল। কখন আসছে এ ভ্যাকসিন বাজারে। সকলেরই একই ধারণা ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এ মহামারি ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমবে না। যাই হোক, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২০ সালের শেষ দিকে বিশ্বের বেশকটি কোম্পানি এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসে। সকল সংশয়-সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এরপর টিকার বিষয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে তা ভুল প্রমাণিত করে ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশব্যাপী গণটিকা দান কর্মসূচি শুরু হলে পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যায়। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানিদের আবিস্কৃত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এই টিকা নিয়ে এক শ্রেণির মানুষ অপরাজনীতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে দেশের জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলে টিকা নিতে অনুৎসাহিতও করেছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত করোনা টিকা মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধে আসলে কতটুকু কার্যকর তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ভারতে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর প্রায় ছয়শ মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর বিবিসি নিউজ বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারতে ১৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত টিকার পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় ছয়শ জনের মতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা এবং বমিভাব। এইতো কিছুদিন আগে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার টিকার সন্দেহজনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। নরওয়ে সর্বপ্রথম রক্ত জমাট বাঁধার (ঃযৎড়সনড়বসনড়ষরপ বাবহঃ) কয়েকটি সন্দেহজনক কেসের ওপর ভিত্তি করে টিকাদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে। এরপর ইতালি, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, নেদারল্যান্ডস, থাইলান্ডসহ আরো কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে টিকাদান শুরুর সপ্তাহ পার না হতেই কর্মসূচি স্থগিত করেছিল জনসন। করোনার অন্যান্য দুই ডোজের টিকার বিপরীতে জনসন এন্ড জনসনের টিকা এক ডোজের হওয়ায়, সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ এবং প্রত্যন্ত ও উষ্ণ অঞ্চলে পরিবহণযোগ্য বলে এটি নিয়ে আশাবাদী ছিল অনেক দেশ। অনুমোদনের আগেই শুধু যুক্তরাজ্য টিকাটির তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি করেছে। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পর জনসন এন্ড জনসনের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান সাময়িক বন্ধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এফডিএ) জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৬৮ লাখের বেশি মানুষ নিয়েছেন এক ডোজের টিকাটি। এদের মধ্যে ছয়জনের দেহে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন; আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরেকজন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া অধিক সংক্রামক ও প্রাণঘাতী ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এটি কার্যকর বলে জানা গিয়েছিল প্রাথমিক গবেষণায়। ফলে সরকারিভাবে জনসনের টিকা প্রয়োগ প্রথম শুরুও হয় দক্ষিণ আফ্রিকাতেই। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে এ টিকা নিয়েছেন প্রায় তিন লাখ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ টিকায় রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্য কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর না মিললেও টিকাটি প্রয়োগ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে স্থগিত করা হয়েছে।
কানাডা এই টিকার এক কোটি ডোজ কেনার অগ্রিম চুক্তি করেছে এবং এপ্রিল মাসের শেষে দেশটিতে প্রথম দফায় কিছু অংশ পৌঁছানোর কথাও ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে জনসনের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্ত জমাট বেঁধেছে যাদের, তারা সবাই নারী এবং বয়স ১৮ থেকে ৪৮ বছরের মধ্যে। টিকা নেয়ার ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার উপসর্গ দেখা দেয় তাদের। জনসন মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বেলজিয়ামে প্রতিষ্ঠানটির ফার্মাসিউটিক্যাল শাখা জ্যানসেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা উদ্ভাবনে কাজ করেছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র জনসন এন্ড জনসনের টিকায় অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকাই বেশি প্রয়োগ হয়েছে দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের যত মানুষ এ পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন, তাদের মাত্র তিন শতাংশ নিয়েছেন জনসনের ডোজ। টিকাগ্রহীতাদের রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ে এক বিবৃতিতে জনসন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পর্যালোচনা চলছে। টিকা প্রয়োগের পরে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধা এবং করোনায় আক্রান্তদের দেহে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনাগুলো আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত জনসনের করোনা প্রতিরোধী টিকার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এর আগে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও এসট্রোজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ দুই ডোজের টিকাতেও একই রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর ফলে এটির প্রয়োগও সীমিত করেছে অনেক দেশ।
বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। যদিও এ নিয়ে হয়েছে অনেক রাজনীতি। অপরাজনীতি। তাছাড়া টিকা নিয়ে বৈশি^ক রাজনীতি তো রয়েছেই। বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, একবারে অর্থনৈতিক বিবেচনা অর্থাৎ বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্যই টিকা বিতরণে সমতার প্রয়োজন। ২০২১ এবং ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধির হিসাব দেয়া হয়েছে সেখানে টিকা পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। র্যান্ড করপোরেশন ইউরোপের জন্য করা এক গবেষণায় মার্কো হাফনার, ইরেজ ইয়ূরশালমি, ক্লিমেন্ট ফেয়স, ইলায়েন ডুফ্রেসনে এবং ক্রিস্টিয়ান ভ্যান স্টোক দেখান যে, যারা টিকা তৈরি করেছে তারাই যদি টিকা পায়, তবে বিশ্বের মোট জিডিপি প্রতি বছর ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে; যদি উচ্চ আয়ের দেশ আর টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো টিকা পায়, তবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে বছরে ২৯২ বিলিয়ন ডলার, আর যদি উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশ এবং টিকা প্রস্তুতকারী দেশগুলো টিকা পায়, তবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দরিদ্র দেশগুলো যতক্ষণ না পর্যন্ত টিকা পাচ্ছে বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ততই দূরের বিষয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলেই দরিদ্র দেশগুলো তা থেকে লাভবান হবে এমন নয়। ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের দেশগুলোর ঋণের বোঝা বাড়বে। শুধু দরিদ্র দেশ নয়, এ মহামারির সবচেয়ে বড় ভার বইতে হচ্ছে দরিদ্র মানুষকে। গত বছর অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে ১১৫ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার, অর্থাৎ দিনে এক ডলার ৯০ সেন্টের নিচে যাদের আয় নিচে চলে গেছেন; এ সংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন হতে পারে। সব মিলে দরিদ্র মানুষের তালিকায় আরও ৫০০ মিলিয়ন মানুষ যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে অক্সফামের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অতিধনীদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বৃদ্ধির পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর পরিসংখ্যানের দিকে তাকানোর দরকার হয় না, তাদের চারপাশে তাকালেই বুঝতে পারার কথা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, এতে করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তাদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার এবং যেগুলো আছে সেগুলোকে জোরদার করা দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা এবং আংশিক বাস্তবায়নের পরে দেখা যাচ্ছে, তা দারিদ্র্য মোকাবিলায় সফল হয়নি। দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে। করোনা সারাবিশ্বে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে শূন্যর কোটায় নেমে এসেছে বলা যায়। অনেকেই আবার প্রশ্ন যেমন রেখেছেন, তেমনি শঙ্কাও দেখেছেন-সারাবিশ্বে ভ্যাকসিন আসার পরেও ২০২১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশ্বের অনেক দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে। সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যখন বাড়তে লাগলো তখন তারা মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে।
“সুরক্ষা” নামক ভ্যাকসিন কার্যক্রম নিবন্ধনের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। টিকার জন্য মানুষ আগ্রহ নিয়ে নিবন্ধন করছে। অনেকে আবার নিবন্ধন করার পর টিকা নিশ্চিত হওয়ার এসএমএস পাচ্ছে না। দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে প্রতিদিন যেখানে প্রায় ৩ লাখের মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছিল-এখন তা বেড়ে দিগুন হয়েছে। নিচ্ছেন। এখন সরকারের মাথা ব্যথা হলো-প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে কিভাবে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা যায়। যদিও কাজটি অনেক কঠিন। প্রান্তিক মানুষরা সহজ-সরল এবং নিরক্ষর হওয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছেন। তাদেরকে কিভাবে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই। তাই চলতি বছরের ৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দেশেই আবিস্কৃত হবে করোনা ভ্যাকিসিনের টিকা। এটি প্রধানমন্ত্রীর একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। ২০২০ সালের ২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। সেদিন তারা জানায়, গত ৮ মার্চ তারা এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন। সব পর্যায়ের কাজ শেষ করতে পারলে এবং সবকিছু যদি ঠিকঠাক হয় তাহলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অথবা চলতি বছরের জানুয়ারিতেই আসতে পারে তাদের ভ্যাকসিন। এ ভ্যাকসিনের নাম রাখা হয়েছে বঙ্গভ্যাক্স। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন যে-তাদের প্রতিষ্ঠান এনিমেল ট্রায়ালে যে আশা করছিলেন, সে রকমই পেয়েছেন। এ ট্রায়ালে তারা শতভাগ সফল হয়েছেন। শুধু কি তাইÑগত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য এবং এরপর বিএমআরসি (বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল) আবেদনও করেছিল। সরকারের এ সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তারা অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে এ ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারার কথা ছিলো। কিন্তু ভ্যাকসিন বাজারে আনার বিষয়ে পুরোটা তাদের হাতে নেই; এর সাথে বিএমআরসি, সরকারসহ অনেক বিষয় জড়িত।
চীনের সিনোভ্যাকের পর আরও কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য অনুমতি চেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান। তারা পাইপলাইনে আছে। তবে এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে অবস্থিত অস্থায়ী করোনা হাসপাতাল এবং বসুন্ধরা করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। যেকোনও দেশ করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করলে তা কেনার জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর সবাই ফ্রি দেবে না, তাই বাংলাদেশ যেন কিনতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রেখেছে সরকার। চীনকে ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। ওই সময়ে আরও কয়েকটি কোম্পানি তারা পাইপলাইনে থেকে অনুমতিও চেয়েছে বলেও জানা গেছে। (তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন-১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০) করোনা প্রতিরোধে কিউবা চারটি টিকা বানিয়েছে, সেগুলো এখন বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতিমধ্যে তার স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। তাঁদের ওপর দুটি টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো এখন তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে আছে। টিকা দুটির মধ্যে একটি হচ্ছে আবডালা। কিউবার ১ লাখ ২৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে এ টিকা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৪৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে চলছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আবডালা টিকাই পুরো লাতিন আমেরিকায় প্রথম বানানো এবং উৎপাদিত টিকা হতে যাচ্ছে। যাই হোক, আমাদের সবাইকে করোনাভাইরাস কে সাথে নিয়ে পথ চলার অভ্যাস করতে হবে। কারণ এটা দীর্ঘস্থায়ী বিষয়। এর প্রভাব বিশ্বে আরও অনেকদিন থাকবে। তাই সবসময় লকডাউনে ঘরে বন্দি হয়ে থাকা যাবে না। সরকারও সবসময় লকডাউন দিয়ে জনগণকে ঘরে বন্দি রাখতে পারে না। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে-বাড়াতে হবে এর সক্ষমতা। টিকা দেয়ার হার যত বাড়বে, করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার তত কমে হবে আসবে।
-লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক
আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্র...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: রাশিয়ায় মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার গ্রা...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak