শিরোনাম
আফছার উদ্দিন লিটন: | আপডেট: ০১:৫৯ এএম, ২০২১-০৮-০২ 775
সাক্ষাৎকার
আলহাজ্ব মো. ফজল আহমদ। তিনি একজন বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। গেরিলা মুক্তিযুদ্ধের সাবেক কমান্ডার। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ফজল আহমদ স্কুল জীবন থেকেই প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী, ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন সামাজিক, গণসংগঠনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি চাকুরী জীবনে প্রায় ৩২ বছর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক সংষদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন ‘বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সদস্য সচিব, তিনি চট্টগ্রাম প্রাতিষ্ঠানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিঃ চট্টগ্রাম এর নির্বাচিত সভাপতি। প্রগতিশীল সহ-সভাপতি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম “ মুক্তিযুদ্ধ ৭১” (চট্টগ্রাম জেলা শাখা), সভাপতি-চট্টগ্রাম প্রাতিষ্ঠানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লি:, আহ্বায়ক-বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রাম), কো-চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম। সভাপতি-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার একজন যুগ্ম পরিচালক ছিলেন। তাঁর সাথে আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক কথা উঠে এসেছে।
আফছার উদ্দিন লিটন: আপনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কি ধরনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চান?
ফজল আহমদ: বাংলাদেশের সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিশেষ কোনো অনুচ্ছেদ নেই।
আফছার উদ্দিন লিটন: মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা এবং শরণার্থীদের তালিকার মধ্যে পার্থক্য কী?
ফজল আহমদ: ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং সেন্টার খোলা হয়েছিল। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত সরকার শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছিল। যারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের তালিকা ভারত সরকারের কাছে আছে।
আফছার উদ্দিন লিটন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রায়শ আপনার স্ট্যাটাস দেখি। এর সবগুলোই জ¦ালাময়ী। প্রতিবাদী। আচ্ছা, আপনার একটি স্ট্যাটাসে দেখলাম “ অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা আইন পাশ করতে হবে। বিষয়টি বুঝলাম না?
ফজল আহমদ: ইদানিং দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন এমপি নেতাদের দ্বারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা অপমানিত হচ্ছে। লাঞ্চিত হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মান-সম্মান রক্ষার জন্য বিশেষ আইন হয়নি। তাই তাদের মান-সম্মান রক্ষায় সুরক্ষা আইন সময়ের দাবি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাশখালি এবং পটিয়ায় ঘটে যায়া তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ।
আফছার উদ্দিন লিটন: চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণে সরকার কি আসলে উদাসীন?
ফজল আহমদ: মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছেন। এরমধ্যে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সন্মুখ সময়ে জীবন দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নেই। শুধু সাভারে আছে। এ লজ্জা কার?
আফছার উদ্দিন লিটন: প্রকৃত মুক্তিসেনারা কি স্বাধীনতার পদক পেতে পারে না?
ফজল আহমদ: আমি দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধিনতা পদক দিতে হবে। অথচ, স্বাধিনতা পদক পাচ্ছে এমন লোকও আছে। যাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কোনো অবদান নেই। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা শুধু ভাতার জন্য যুদ্ধ করেনি। তারা দেশ ও জাতির জন্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু তারা কি প্রকৃত রাষ্ট্রিয় সম্মান পাচ্ছেন। এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
আফছার উদ্দিন লিটন: অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ ও ধান্ধাবাজ হয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন। এ বিষয়ে কি বলবেন?
ফজল আহমদ: প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধারা কখনো দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ ও ধান্ধাবাজ হতে পারেনা। যারা এ কাজে আছে তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দুশমন। আমরা তাদের তীব্র ঘৃণা করি। তাদের বিচার দাবি করছি।
আফছার উদ্দিন লিটন: ১ ডিসেম্বরকে সরকার কেন এবং কি কারণে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণা করবে?
ফজল আহমদ: ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরের শুরুতেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ছাত্র সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডামি রাইফেল দিয়ে মার্চ করে। তাই ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি।
আফছার উদ্দিন লিটন: আপনার মতে যে কোনো একটি দিনকে সরকার কেন এবং কি কারণে “ জাতীয় সত্যবাক্য দিবস ” ঘোষণা করবে?
ফজল আহমদ: আমরা ৩৬৫ দিনের কোনো না কোনো সময়ে মিথ্যা কথা বলে থাকি। তাছাড়া প্রতিদিনই নানা কারণে আমাদেরকে মিথ্যা কথা বলতে হয়। তাই বছরের একটি দিন যদি আমরা প্রতিজ্ঞা করে সত্য কথা বলি তা জাতির জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
আফছার উদ্দিন লিটন: সম্ভবত ৯ ডিসেম্বর “দুর্নীতি দমন কমিশন দিবস রয়েছে। আমার জানা মতে জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তজার্তিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দুদক ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালন শুরু করে। তাহলে সরকার আপনার মতে যে কোনো একটি দিনকে “ জাতীয় দুর্নীতিমুক্ত দিবস ” ঘোষণা করবে কেন?
ফজল আহমদ: সরকারি কোনো অফিস নাই, যেখানে এখন দুর্নীতি হয়না। দুর্নীতি আমাদের সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমরা জাতি হিসেবে দিনদিন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। আমাদের কাছ থেকে দেশপ্রেম হারিয়ে যাচ্ছে। এই জাতি কি একটি দিনও দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারেনা? সে লক্ষ্য থেকেই আমার মাথায় আসলো সরকার যেনো একটি দিনকে “জাতীয় দুর্নীতিমুক্ত দিবস ” ঘোষণা করে।
আফছার উদ্দিন লিটন: বঙ্গবন্ধু সবসময় শোষিতদের পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ, মজুতদার, কালোবাজারি, স্মাগলারদের বিরুদ্ধে ছিলেন। বিষয়টি আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
ফজল আহমদ: অবশ্যই বঙ্গবন্ধু সবসময় শোষিতদের পক্ষে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জনগণের নেতা ছিলেন। মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। মানুষের কষ্টকে নিজের মনে করতেন। তিনি দু:খী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিলেন। যার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেখা গেল দুর্নীতিবাজ, মজুতদার, মুনাফাখোর, কালোবাজারি, স্মাগলারদের দখলে চলে যায় দেশ। তাই বঙ্গবন্ধু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
আফছার উদ্দিন লিটন: “এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে। যেদিন বাংলাদেশের কৃষক, মজুর ও দু:খী মানুষের সকল দু:খের অবসান হবে।” বঙ্গবন্ধু তাঁর এ অমর বাণিতে দেশের অবহেলিত মানুষকে কি ধরনের বার্তা দিয়ে গেছেন?
ফজল আহমদ: বঙ্গবন্ধু দু:খি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ফসল ঘরে তুলেছে দুর্নীতিবাজ, মজুতদার, মুনাফাখোর, কালোবাজারি, টেন্ডারবাজ আর চোর-ডাকাতেরা। বঙ্গবন্ধুর অতৃপ্তিই থেকে গেল। তিনি দু:খি মানুষের মুখে হাসি দেখে যেতে পারেনি।
আফছার উদ্দিন লিটন: সোনার বাংলায় বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন চোরের খনি। চোরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়েছে। বিষয়টি কতটুকু বাস্তবসম্মত?
ফজল আহমদ: বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় আজীবন লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক দলকে সংগঠিত করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা। বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ যেনো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মানচিত্রে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারপর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ একশ্রেণীর লুটেরা, মুনাফাখোর, বাংলাদেশবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুরা দেশে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে। অতি বিপ্লবীরা বিশেষ করে জাসদ গণবাহিনী সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুকেকে হত্যা করার জন্য পাকিস্তান ফেরত সামরিক বাহিনীর গুলিতে তাঁকে জীবন দিতে হয়। বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় বলেছেন, পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা পাই সোনার খনি, হীরের খনি-আর আমি পেলাম চোরের খনি।
আফছার উদ্দিন লিটন: এখন রাজনীতি কেউ করে না। দল করে। আবার অনেকেই দলের আদর্শের সাথে নাই। বড় ভাইয়ের কথায় চলে। স্লোগানও দিয়ে থাকে বড় ভাইয়ের নামে। বিষয়টির মানে কী?
ফজল আহমদ: বিষয়টা একদম সহজ, আপনি না বুঝার আমি কোনো কারণ দেখছি না। এখন যারা রাজনীতি করে তারা স্বার্থের রাজনীতি করে। সুবিধা লাভের জন্য রাজনীতি করে। সাধারণ মানুষের জায়গা দখলের জন্য রাজনীতি করে। জাল বরাদ্দ ও জাল দলিল সৃজন করে সরকারি খাস জায়গা দখলের জন্য রাজনীতি করে। এলাকায় আধিপত্যর জন্য রাজনীতি করে। টেন্ডারের জন্য রাজনীতি করে। সরকারি নিয়োগ বাণিজ্যর জন্য রাজনীতি করে। যে কারণে মেধাবিরা মেধা থাকা সত্ত্বেও টাকার জন্য চাকরি পাইনা। এখন যারা রাজনীতি করে তারা দলের নাম বিক্রি করে চলে। যাদের সাথে দলের কোনো আদর্শের মিল নেই। এরা কোনো আদর্শও মেনে চলে না। তাদের মুখ্য হচ্ছে টাকা। দেশের রাজনীতি এখন বড় ভাই এবং গ্রুপ কেন্দ্রিক। তারা বড় ভাইয়ের কথায় উঠে-বসে। রাজনীতির মাঠে বড় বড় স্লোগানও দিয়ে থাকে। ওমুক ভাইয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র। ওমুক ভাইয়ের কিছু হলে জ¦লবে আগুন ঘরে ঘরে। তারা তাদের বড় ভাইয়ের কথায় মানুষ খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু তারা বিপদে পড়লে তাদেও বড় ভাইকে পাওয়া যায়না।
আফছার উদ্দিন লিটন: একই তারিখ ১৮ মে আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আরও একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই স্ট্যাটাসটি ছিল ২৬ রমজান রবিবার ৯মে দিবাগত থেকে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের বর্বর হামলা নিয়ে। যেদিন ছিল পবিত্র শবে কদ্বরের রাত। সেখানে আপনি লিখেছেন প্যালেস্টাইনের হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিশ্বমানবাধিকার সংগঠনগুলো নীরব। তাদের কোনো বিবৃতি নাই। এসব সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের দেশে তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করার কথাও বলেছেন?
ফজল আহমদ: ইতিহাস বলে ১৯৪৭ সালে জাহাজ ভর্তি করে ইউরোপ থেকে ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকেরা ফিলিস্তিনের বন্দরে এসেছে। ফিলিস্তিনের জনগনের উদ্দেশ্য জাহাজে একটা ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছিল তারা। সেই ব্যানারে লেখা ছিল, "জার্মানেরা আমাদের ঘর আর পরিবার ধ্বংস করেছে, তোমারা আমাদের আশাকে ধ্বংস করোনা।" আর আজ সেই জনগোষ্ঠীর উত্তরসূরীরা ফিলিস্তিনের ভুমিপুত্রদের ঘর, পরিবার আর প্রত্যেক ইঞ্চি মাটিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অবৈধ দখলদার বর্বর ইসরায়েলী বাহিনীর অতীত ও বর্তমান বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ন্যাক্কারজনক হামলা থেকে নিরীহ ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য মুসলিম বিশ্ব সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। কেননা ইহুদিরা শান্তিপ্রিয় নয়। তারা কিছুদিন পরপর ফিলিস্তিনিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এ বর্বর জাতির দু:সাহস দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাদের কাছে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়। তাদের কাছে পবিত্র রমজান মাস, ঈদের দিন ও শবে কদরের দিন বলে কোনো কথা নেই। সবদিন এক মনে হয়। রবিবার ৯ মে ২৬ রমজান দিবাগত রাত শবেকদরের দিনে গাজায় আল-আকসা মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপর হামলা চালানোয় প্রমাণ করে তারা আসলেই যাযাবর এবং বর্বর জাতি। যাদের কাছে নেই কোনো মানবতা। যাদের কাছে নিরাপদ নয় মসজিদের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। হিটলার মানুষ চিনতে ভুল করেনি। তিনি ইহুদিদের নিধন করে সঠিক কাজ করেছিল। এদিকে, শুধু এবার নয়। বছরের পর বছর ইহুদিরা নিরীহ ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যা করে চলেছে। যে হত্যা থামার নয়। মাঝেমাঝে আন্তর্জাতিক চাপে ইসরাইলিরা যুদ্ধবিরতি রাখলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার ফিলিস্তিনিদের উপর ঝাপিয়ে তারা মানুষ হত্যায় মেতে উঠে। অথচ এ নিয়ে জাতিসংঘ কোনো ভুমিকাই রাখছে না। জাতিসংঘের অধিনে ইউএনডিপি, ইউএনএইচসিআর ও ইউনিসেফ একেবারেই নীরব। বিশে^র অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নীরব রয়েছে। তাদের কাছ থেকেও কোনো বিবৃতি আসেনি। যা সারাবিশে^র মানুষকে হতাশ করেছে। যে কারণে আমি আমার সামাজিক স্ট্যাটাসে এসব সা¤্রাজ্যবাদী এজেন্টদের দেশে তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করার কথা বলেছিলাম। কারণ, ইসরাইলের ইহুদিরা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর বছরের পর বছর গণহত্যা করে গেলেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো নীরব থাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
আফছার উদ্দিন লিটন: মার্কিণ সাম্রাজ্যবাদের/ দোসর ইসরায়েলকে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য আরববিশ্বের মুসলিম দেশগুলো যথেষ্ট। কিন্তু তাদের মাঝেই তো ঐক্য নেই?
ফজল আহমদ: মুসলমান দেশগুলো একে-অপরের ভাই ভাই। ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে সকল মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। মধ্যপ্রাচ্যর উন্নত মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলি বর্বরতাকে রুখে দিতে হবে। ইহুদিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। তাদের অপশক্তি ভেঙে চূড়মার করে দিতে হবে। যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে ইসরায়েলি এবং ইহুদি পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকুন। সারাবিশ্বের মুসলমানরা যখন ইহুদি পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকবে, তখন এমনিতেই তারা দুর্বল হয়ে যাবে। তাদের তখন সামরিক শক্তি ও সেনাবাহিনী দিন দিন নিস্ক্রিয় হয়ে পড়বে। বোমা বানানোর টাকা তাদের আর থাকবে না। কাজেই আমাদেরকে ইসরাইলি পণ্য আর না কিনে তাদেরকে জানাতে হবে ধিক্কার। তাদেরকে দিতে হবে ঘৃণা। তাদেরকে দিতে হবে অভিশাপ।
আফছার উদ্দিন লিটন: মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা মার্কিন নির্ভর। মার্কিনের সেবাদাস। যে কারণে প্যালেস্টাইনের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনি কি একমত?
ফজল আহমদ: একমত। আমি জোর গলায় বলতে পারি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইহুদিরা শুধু ফিলিস্তিদের শোষণ করছে না ; তারা এখন সারাবিশ^ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। কারণ ইসরাইলিরা শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যায়নি, তারা অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। যা মুসলমানদের জন্য চিন্তার অন্যতম কারণ। আমাদের মুসলিম বিশ্বের অহংকার আমেরিকার মিসিসিপির অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মিসেস রাশিদা তৈয়ব, ফিলিস্তিনের নীরিহ শিশু, মা, বাবা, ভাই ও বোনদের উপরে রাত, দিন যে নারকীয় হত্যা এবং ধ্বংসলীলা ইসরাইল চালিয়েছিল সে বিষয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে জোরালো প্রতিবাদ করেছেন। প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে সিনেট কমিটিতে এবং মিসিসিপি পরিদর্শনে গেলে সিনেটর মিসেস রাশিদা তৈয়ব ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা প্রসঙ্গে যেভাবে উওেজিত হয়ে প্রতিবাদ করেছেন তা মুসলমান জাতির ইতিহাসে চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে। অথচ, আমাদের তথাকথিত মুসলমান রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং সৌদিআরবের কোন ভূমিকা এবং কৃতিত্ব নেই । দয়াময় আল্লাহ যেনো তাঁকে সুস্থতার সাথে নেক হায়াতদানে দীর্ঘজীবি করেন।
আফছার উদ্দিন লিটন: এদিকে, আমেরিকায় সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন হয়না। জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প, জো বাইডেন যাই বলুন না কেন নীতিগত বিষয়ে তারা এক নয় কী?
ফজল আহমদ: আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে সেদেশের সরকার যে যখন ক্ষমতায় থাকুক জাতীয় এবং রাষ্ট্রিয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে তারা সকলেই এক। তারা কোনো স্বার্থকে ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে নেয়না। যে কারণে তাদের পররাষ্ট্রনীতি এক। নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাদের পররাষ্ট্রনীতি এক। সেদেশে জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই টার্মে ৯ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সেদেশে এর বেশি থাকার নিয়মও নেই। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র খুব শক্তিশারী। যেখানে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। শুধু তাদের নির্বাচনে ইসরাইল অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আর এ সুযোগটা দিয়ে যাচ্ছেন আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানরা। যে কারণে ইহুদিরা যুক্তরাষ্ট্রে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র নয় পৃথিবীর অনেক দেশকেই এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন।
আফছার উদ্দিন লিটন: আপনি কি মনে করেন একটি দেশ ধ্বংস হওয়ার জন্য জঘন্য বোমা, ঘুমন্ত প্রজা, বিক্রীত আইনজীবী ও সাংবাদিকরাই কি যথেষ্ট?
ফজল আহমদ: একটি দেশ ধ্বংস করার জন্য জঘন্য বোমা, মিসাইলের চেয়ে ঘুমন্ত প্রজা, বিক্রীত আইনজীবী, বিক্রীত প্রশাসন, বিক্রীত সাংবাদিকরাই দায়ি। কেননা বোমা, মিসাইলে রাষ্ট্র এবং জনগণের স্থাপনা নষ্ট হবে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে। কিন্তু ঘুমন্ত প্রজা, বিক্রীত আইনজীবী, বিক্রীত প্রশাসন, বিক্রীত সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখে চুপ থাকলে দেশ নিশ্চিহ্ন হতে বেশিদিন লাগে না। একটি রাষ্ট্রের উন্নতির মূলে রয়েছে সচেতন জনগণ-মানে প্রজা। দেশের ক্রান্তিকালে প্রজাদেরও সরব ভূমিকা রাখতে হবে। সাংবাদিকরাই হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের কর্মী। একটি রাষ্ট্রের উন্নতি-অবনতি নির্ভর করে সঠিক সাংবাদিকতার উপর। একই অবস্থা প্রশাসন ও আইনজীবীর ক্ষেত্রেও। বিচারবিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। নির্যাতিত ও মজলুম জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল হলো-বিচারালয়। আর সে বিচারালয়ে সাধারণ জনগণ নিরাপদ নয়। সেখানেও তারা ন্যায়বিচার পাইনা। পাবে কিভাবে? নির্যাতিত মানুষের প্রতিনিধি আইনজীবীরা সৎ নয়। টাকা ছাড়া তারা কিছু বুঝে না। এরা সৎ ও আন্তরিক না হলে বিচারক সঠিক রায় কিভাবে দিবে? তাছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিচারব্যবস্থার উপরও নির্ভর করে। তাই দেশের জনগণের ভাগ্য ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে প্রশাসন, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের সৎ হতে হবে।
আফছার উদ্দিন লিটন: রাজনীতি থেকে টাকা আয় করা বন্ধ হলে ৯০ ভাগ মানুষ রাজনীতি ছেড়ে কাজে মন দেবে। দেশে দুর্নীতি থাকবে না। খুন-খারাবি থাকবে না। এ কথার মাঝে আপনি কতটুকু সত্যতা খুঁজে পান?
ফজল আহমদ: আপনার এ প্রশ্নের মাঝে আমি শতভাগ সত্যতা খুঁজে পাই। যেটা সত্য কথা, সেটা বলতেই হচ্ছে-একসময় রাজনীতি মানে ছিল জনগণের সেবা। রাজনীতিবিদরা জনগণের সেবা করতেন। আর এখন রাজনীতি মানে ব্যবসা। এখন রাজনীতি মানে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মনোনয়ন বাণিজ্য, ভূমিদস্যুপনা ও মাদক ব্যবসা। এখনকার রাজনীতিতে সরকারি দলের সদস্য হতে হলেও চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে হয়। যে কারণে দেশে বেড়েছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। বেড়েছে চাঁদাবাজি। বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। যে কারণে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা এখন রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছে। দেশ থেকে এসব দূর না হলে রাজনীতির সঠিক পরিবেশ ফিরে আসবে না। রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, পতিতা ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতা বন্ধ হলে দেশে দুর্নীতি থাকবে না। খুন-খারাবিও থাকবে না। টোকাই থেকে আর কেউ নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখবে না। রাজনীতি থেকে টাকা আয় করা বন্ধ হলে ৯০ ভাগ মানুষ রাজনীতি ছেড়ে কাজে মন দেবে। তখন প্রকৃত রাজনীতিবিদরা আবার মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিবে।
আফছার উদ্দিন লিটন: এবার করোনা প্রসঙ্গে আসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপনি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে আপনি লিখেছেন “করোনাকালীন জাতির এ দু:সময়ে জাতীয় লুটেরা শ্রেণি আত্মগোপনে রয়েছে”। সরকারের উচিত তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করা?
ফজল আহমদ: “করোনাকালীন জাতির এ দু:সময়ে জাতীয় লুটেরা শ্রেণি আত্মগোপনে রয়েছে”। অথচ-তাদের এখন দাঁড়ানোর কথা সাধারণ মানুষের পাশে। কিন্তু তারা আত্মগোপনে থাকায় সাধারণ মানুষ না খেয়ে মরছে। গতবার লকডাউনে আমরা দেখেছিলাম সরকারি দলের রাজনীতিবিদরা অসহায় মানুষের ত্রাণ লুট করেছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সরকার প্রধান যেখানে দেশের অসহায় মানুষকে জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের ত্রাণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে; সেখানে তারা চুরি করে কিভাবে! সরকারের উচিত তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করা। জাতির এ ক্রান্তিকালে যারা অসহায় মানুষের হক খেয়ে ফেলে তারা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। স্বাস্থ্যখাতে গত বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি হয়নি। বরাদ্দ দ্বিগুণ করলেও এ খাতের উন্নতি হবে না। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি সমূলে উৎপাটিত করতে হলে সেখানে সৎ ও মেধাবি লোকদেও নিয়োগ দিতে হবে।
আফছার উদ্দিন লিটন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে চলছে এখন সর্বাত্মক লকডাউন। মাঠে প্রশাসনও তৎপর হয়েছে। জনগণকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতে সেনাবাহিনী, বিজিবি’র সাথে কাজ করছে পুলিশ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছিল করোনার প্রথম ঠেউ। তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। মনে হচ্ছে করোনা শুধুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তাই শুধু দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষৎ কী?
ফজল আহমদ: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বেড়ে চলায় প্রশাসনের তৎপর হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ, সাধারণ মানুষ করোনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই তারা মুখে মাস্ক পড়াসহ করোনার অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অপারগতা প্রকাশ করছে। লকডাউনে তাদের সমর্থন নেই বললেই চলে। কেননা লকডাউনে তাদের আয়-রোজগার না হলে তারা দু:শ্চিন্তায় পড়ে যায়। দরিদ্র মানুষের ভয় করোনাকে নয়; ক্ষুধাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এ করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রোবর্ট এবং ভার্চুয়ালমুখি হয়ে যাচ্ছে। মহামারির শুরুতে গত বছরের ১৭ মার্চ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও এখনো সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী খোলা হয়নি। করোনাকালে শিক্ষা খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে উল্লেখ করে দ্রুত শক্ষিাপ্রতষ্ঠিান খুলে দয়োর দাবিও উঠেছে। সরকারি দলের সদস্যরা শক্ষিাপ্রতষ্ঠিান খুলে দয়োর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি (বুধবার) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে সাবকে গণশক্ষিা প্রতমিন্ত্রী মোতাহের হোসেন ও সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোর্য়াদ্দার শক্ষিাপ্রতষ্ঠিান দ্রুত খুলে দয়োর কথা বলেন। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ক্লাস হলেও তা যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত।
আফছার উদ্দিন লিটন: অনেকেই বলছেন করোনা একটি ¯œায়ুয়ুদ্ধ স্নায়ুযুদ্ধ। আবার অনেকেই করোনাকে তৃতীয় যুদ্ধের সাথে তুলনা করছেন। আপনার মতে করোনা কি মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার যুদ্ধ ?
ফজল আহমদ: হ্যা, এটি অবশ্যই স্নায়ুযুদ্ধ। মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার যুদ্ধ। সারাবিশে^র মানুষ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মহামারি করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করেই যাচ্ছে। এ যুদ্ধ করতে গিয়ে সাধারণ হতদরিদ্র মানুষগুলো হয়েছে সর্বস্বান্ত। অনেকেই মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙ্গে পড়ছে। অনেকেই আবার আয়-রোজগার না থাকায় আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। করোনার কারণে বৈশ্বিক ক্রান্তিকাল সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে এ ক্রান্তিকাল দূর হয়ে যায়।
আফছার উদ্দিন লিটন: করোনায় সমগ্র বিশ্বে থমকে আছে। করোনা মানুষকে কর্মহীন করেছে। করোনায় বেড়েছে দারিদ্র্যতা। মানুষের মাঝে বেড়েছে অস্থিরতা আর উদ্বিগ্নতা। এ নিয়ে কি বলবেন?
ফজল আহমদ: খোদার ঈশারায় সমগ্র বিশ্বে থমকে আছে। মহামারি প্রতি শতাব্দিতে একবারই হয়। সমগ্র বিশ^ই যেখানে অস্থিরতা আর উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে; সেখানে কিছু সংখ্যক মানুষতো কর্মহীন হবেই। দারিদ্র্যতা বাড়বে। এটা স্বাভাবিক। তবে বেশি বেকায়দায় আছেন আমাদের মতো দরিদ্র দেশের মানুষগুলো। তাই সরকারের উচিৎ দরিদ্র মানুষের প্রতি একটু নজর দেয়া। যাতে তারা খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারে।
আফছার উদ্দিন লিটন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ থেকে কোনো ব্যক্তি ফেরত আসলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তা অনেকেই মানছে না?
ফজল আহমদ: করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন হলো যারা সদ্য বিদেশ থেকে এসেছে। কেননা, কোয়ারেন্টাইন তাদের জন্য প্রযোজ্য বেশি। যে রোগের জন্য কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে রাখা হয় সেই রোগের জীবাণুর সুপ্তকাল কত দিন সেটার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়; ওই রোগের জন্য মানুষকে কতদিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে, এই ভাইরাসটির সুপ্তকাল হচ্ছে ১৪ দিন। অর্থাৎ ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে এই সময়কালের মধ্যে তার উপসর্গ দেখা দেবে। কারণÑতার মধ্যে যখন উপসর্গ দেখা দেয়, তখন তার থেকে অন্যদের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ায়।
আফছার উদ্দিন লিটন: প্রবাসেও বাঙালিরা কর্মহীন থাকায় বেকারত্ব বাড়ছে। প্রবাসীরা কোভিড-১৯ নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন রয়েছে। ফলে দেশে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স কম আসছে। এ বিষয়ে কি বলবেন?
ফজল আহমদ: সারাবিশে^ করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসেও বাংলাদেশিরা ভালো নেই। প্রবাসীরা মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদ্বিগ্ন আর উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। করোনায় ভয়ে তারা প্রবাস ছেড়ে স্বদেশে আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাতে। তাতেও তাদো রেহায় নেই। স্বস্তি নেই। এয়ারপোর্ট সহ নানা জায়গায় তাদেরকে ভোগান্তি এবং হয়রানির স্বীকার হতে হয়। অথচ, তারা রেমিটেন্স যোদ্ধা। তাদো উপার্জনে দেশ চলছে। করোনাকালীন দু:সময়ে দেশে-বিদেশে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যাতে দেশে ফেরা প্রবাসীরা আর শঙ্কায় না থাকে।
আফছার উদ্দিন লিটন: এবার আসি লকডাউন প্রসঙ্গে-সাধারণ মানুষ লকডাউন চাইনা। আর খেটে খাওয়া মানুষতো এর সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। তাদের মতে যারা লকডাউন দেয়ার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়; তারা কি জানে না-এদেশের দিনমজুর হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষরা কিভাবে চলে। সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ চাই সরকার বারাবার অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন না দিয়ে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধির উপর জোর দিতে। এ নিয়ে কি বলবেন?
ফজল আহমদ: সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের লকডাউন মেনে চলা উচিৎ। আসলে দরিদ্র মানুষেরা লকডাউন মেনে চলার জন্য প্রস্তুত নয়। জীবনরক্ষা আমাদের দুভাবেই করতে হবে। করোনা সংক্রমণের দিকে যেমন করতে হবে ঠিক তেমনি ক্ষুধা নিবারণের জন্যও করতে হবে। কঠোর লকডাউন বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ এটি একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। যেহেতু বাংলাদেশ দরিদ্র রাষ্ট্র। কোরবান ঈদের আগে সরকারের পূর্ব ষোষণা অনুযায়ী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিনের যে চলমান লকডাউন-তা জনগণ সমর্থন করলেও ১ আগস্ট আবার গার্মেন্টসশিল্প চালু হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সরকার হঠাৎ করে আবার গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বিপাকে পড়ে যায় সাধারণ মানুষ। ফলে, আবার করোনা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা যায়। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে শ্রমজীবী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। শেষ পর্যন্ত সরকার আরও একটি ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে। ওই ঘোষণা অনুযায়ী ১ আগস্ট রবিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত লঞ্চের পাশাপাশি গণপরিবহনও চালু থাকবে। যাতে তারা নির্বিঘেœ /নির্বিঘ্নে গার্মেন্টেসের চাকরিতে যোগদান করতে পারে। বারবার অপরিকল্পিত লকডাউন আমাদেরকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
---------------------
আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্র...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: রাশিয়ায় মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার গ্রা...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak