শিরোনাম
চট্টলার ডাক ডেস্ক: | আপডেট: ০৩:০৩ এএম, ২০২১-০৭-১৫ 727
ইতালিয়ান ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার নায়ক রবার্তো মানচিনি
২০১৮ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে না পারায় ইতালিয়ান ফুটবলের শেষকৃত্যও প্রায় সারা হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে ইতালিয়ান ফুটবলের আবারও ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠা সাম্প্রতিক ফুটবলের রোমাঞ্চকর গল্পগুলোর একটি। পড়ুন রবার্তো মানচিনির ইতালির সেই গল্প।
কে ভেবেছিল, ইতালি ডার্ক হর্স, একদিন এমনও শুনতে হবে! চারবার বিশ্বকাপজয়ী একটা দলকে ‘ডার্ক হর্স’ ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় কি না সেটা তর্কযোগ্য, এই লেখায় কিছুটা অপ্রাসঙ্গিকও। যাই হোক, টুর্নামেন্টের আগে আলোচনায় থাকাটাও ইতালির জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতাই। ‘টুর্নামেন্ট আউটসাইডার’ এর তকমা পেয়ে এবার যতটা আলোচনায় এসেছে ইতালি, তা-ও তো আগে হয়নি কখনো। কোনো বড় টুর্নামেন্টের আগেই আজ্জুরিদের নিয়ে তেমন শোরগোল ওঠে না, ফেবারিটদের তালিকাতেও তাদের নাম খুব একটা আসে না। আর এবার তো সেই প্রশ্নই ওঠে না, বছর তিন আগে যে ইতালিয়ান ফুটবলের শেষকৃত্য করে ফেলেছিল সবাই, সেই ইতালি আবার ফেবারিট হয় কী করে!
শেষকৃত্য পুনর্জন্মে রূপ নিতে বেশি সময় লাগেনি। বলতে পারেন, সেটি ছদ্মবেশে পাওয়া আশীর্বাদ হয়েই এসেছে। ছাই থেকে আবার জেগে ওঠা ফিনিক্সরূপী ইতালিয়ান ফুটবলের চেহারাটাই বরং বদলে গেছে। প্রথাগত ইতালিয়ান ফুটবল বললেই যে জীবন দিয়ে ডিফেন্স করে কাউন্টারে গোল দিয়ে আসার কল্পচিত্র ভেসে ওঠে, সেরকম নয়। ট্যাকটিশিয়ানদের কাছে যার নাম কাত্তানেচ্চিও, ফুটবল রোমান্টিকের কাছে এন্টি-ফুটবল। এত বছরে রক্তে মিশে যাওয়া সে স্বভাবগত ফুটবল থেকে সরে আসা, দায়িত্বে থাকা লোকটার নাম রবার্তো মানচিনি বলেই।
এনে পড়ে, সুইডেনের বিপক্ষে ২০১৮ ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইয়িং প্লে-অফে হেরে ৫০ বছরে প্রথম ইতালিবিহীন বিশ্বকাপ যখন অকল্পনীয় বাস্তবতা, ট্র্যাজেডির মূল খুঁজতে তখন গলদঘর্ম ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। ইতালিয়ান ফুটবলের ‘আপাদমস্তক তদন্ত পরিণত সময়ের দাবিতে। সেই দায়িত্ব পড়ল ইতালিয়ান অলিম্পিক কমিটির ওপর। দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই ভদ্রলোকের একজন মিলান গ্রেট, আলেসান্দ্রো কোস্তাকুর্তা। ইতালিয়ান ফুটবলে দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা সুইডেনের বিপক্ষের ম্যাচটিই দেখতে বসেন আবার। পোস্টমর্টেমে সঙ্গী মানচিনি। ইতালিয়ান ফুটবলকে আবার জাগিয়ে তুলতে যাঁর শরণাপন্ন হয়েছে ইতালিয়ান ফেডারেশন। ওই ম্যাচটা আবার দেখেই ট্র্যাজেডির কারণ স্পষ্ট হয়ে গেল দুজনের কাছেই। খেলা হচ্ছে ইতালি ও সুইডেনের, প্রথম লেগে ডি রসির আত্মঘাতী গোলে হেরে আসায় গোলও প্রয়োজন ইতালির, অথচ প্রায় পুরো ম্যাচই কিনা দুই স্ট্রাইকার বেলত্তি আর ইমমোবিলে নিজেদের অর্ধে! মানচিনির কাছে সহজ একটা চাওয়াও জানিয়ে দিলেন কোস্তাকুর্তা। এই ফুটবলটাই খেলতে হবে, কিন্তু প্রতিপক্ষের অর্ধে। যা শুনে মানচিনির উত্তরও খুব সহজ, ‘তাহলে তুমি ঠিক মানুষের কাছেই এসেছ’।
দায়িত্বে এসে সিস্টেমটাই আমূল পাল্টে ফেলেন মানচিনি। কাজ শুরু করেন একদম গোড়া থেকে। যে ৪-৩-৩ ফরমেশন এখন সিনিয়র টিমের স্টেপল ফরমেশন, নিশ্চিত করেন ইতালির প্রতিটি বয়সভিত্তিক পর্যায়েও যেন খেলা হয় সেটাই। সবাই একই সিস্টেমে খেলে আসায় এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে যাওয়ার পর তাই নতুন করে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার নেই, সিস্টেমে নিজের ভূমিকাটাও খুব পরিষ্কার। বয়সভিত্তিক দলগুলোতে খেলে আসা এক ঝাঁক তরুণের আবির্ভাবও এসেছে আশীর্বাদ হয়ে।
বরাবরই তারুণ্যে ভরসা মানচিনির। নিকোলো জানিওলো ১৯ বছর বয়সে যখন মানচিনির ইতালি দলে ডাক পান, ক্লাব রোমার হয়ে তখনও কোনো ম্যাচই খেলা হয়নি তাঁর! মানচিনি নিজের গল্পটাও তো অনেকটা একই রকম। জাতীয় দলে প্রথম ডাক পেয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সেই। তবে বিয়ারজোট-সাক্কির সঙ্গে গন্ডগোল আর বাজ্জিও-ভিয়ালিদের আবির্ভাবে জায়গা না পাওয়া, সব মিলিয়ে জাতীয় দলের স্মৃতি মানচিনির মনে সুখের চেয়ে দুঃখের অনুভূতিই বেশি ছড়ায়। তার চেয়েও বেশি আক্ষেপের।
মানচিনির সামনে সুযোগ এবার শাপমোচনের, ইউরোটা না জিতলেও চিয়েসা, বারেল্লা, লোকাতেল্লিদের নিয়ে গড়া দলটা পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে সামনের বছরের কাতার বিশ্বকাপ আসতে আসতে। বাইরে না বললেও লুকিয়ে লুকিয়ে নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছেন ইউরোই জিতে ফেলার। সেই স্বপ্ন দেখাটাকে বাড়াবাড়ি বলারও উপায় নেই। ৩৪ ম্যাচ ধরে অপরাজিত মানচিনির দল, ২০১৮ সালের মে মাসের পর হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে মাত্রই দুবার। এবারের ইউরো-২০২০ এর গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড ও ওয়েলসকে হারিয়ে অপরাজিত থেকেই ছুঁয়ে ফেলেছেন পরপর দুটি বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র কোচ ভিত্তোরিও পোজ্জোর ইতালির ৮২ বছর বয়সী রেকর্ড।
এবার রেকর্ডেও বয়স থেকে খেলোয়াড়ের বয়সে আসি। ইতালিয়ান ডিফেন্সের চির তরুণ দুই স্তম্ভের কথা তো বলতেই হবে। আজও যেখানে দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছেন লিওনার্দো বোনুচ্চি ও জর্জিও চিয়েলিন্নি। যদিও প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে চিয়েলিন্নির নামের পাশে, টানা এতগুলো ম্যাচের ঝক্কি ‘বুড়ো’ শরীর নিতে পারবে তো! না নিতে পারলেও তা মানচিনির কপালে ভাঁজ ফেলবে বলে মনে হয় না। স্কোয়াডে যে আছেন এবছর ইন্টারের হয়ে দারুণ খেলে লিগ জেতা ২২ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক আলেসান্দ্রো বাস্তোনি। এই ইতালি দলে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলটাই আলাদা করে দিচ্ছে অন্যদের থেকে। মাঝমাঠে যেমন আছে মার্কো ভেরাত্তি ও জর্জিনিওর অভিজ্ঞতা, তেমনি আছে চিয়েসা ও বারেল্লার তারুণ্যের দুঃসাহস।
ইতালির বর্তমান খেলার ধরনটাও বেশ মানিয়ে যায় এর সাথে। ফুটবল খেলাটাই যে গোলাকৃতির বলটা নিয়ে, ইতালি বেশিরভাগ সময় তো খেলত সেই বল ছাড়াই। আগে নিজে বাঁচো, পরে সুযোগ পেলে গোল দেয়া যাবে। কোনোভাবে আগে গোল দিয়ে বসলে তো কথাই নেই, প্রতিপক্ষের জন্য সব দুয়ার ইতালি এমনভাবেই বন্ধ করে দিত যে, খেলার ফল ঘোষণা করে দেওয়া যেত তখনই।
মানচিনির ইতালি ঠিক তার বিপরীত, খেলার ভিত্তিই পজেশনভিত্তিক এটাকিং ফুটবল। তবে তা আবার অলআউট এটাক না। ব্যাক ফোরের লেফট ব্যাক স্পিনাজ্জোলা বেশ আক্রমণাত্মক, সুযোগ পেলেই ওভারল্যাপ করেন। যার সুযোগ নিয়ে কাট-ইন করেন ইনভার্টেড উইঙ্গার লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে। ফুল ব্যাক জুড়ির আরেকজন ফ্লোরেঞ্জি তখন আবার একটু নেমে আসেন। বোনুচ্চি-চিয়েলিনির সাথে এসে বানিয়ে ফেলেন ব্যাক থ্রি। ডান পাশের ফাঁকা জায়গাটা কাজে লাগাতে তাই ৪-৩-৩ এর সামনের তিনের ডানেরজন হয়ে যান আউট অ্যান্ড আউট উইঙ্গার। বেরার্দি-চিয়েসা-বার্নাদেস্কিতে এই ভূমিকাতেও বিকল্পের অভাব নেই ইতালির। আর মাঝমাঠে ভেরাত্তি-জর্জিনিও তো আছেনই।
সমস্যাও যে নেই, তা না। ম্যাচ জিততে গোল দেয়ার যে ছোট্ট কাজটা করতে হয়, সেখানেই সবচেয়ে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। সারা বছর লাৎসিওতে মুড়িমুড়কির মতো গোল করে আসা চিরো ইমোবিলেÑযে ইতালির জার্সি গায়ে চড়ালেই গোল করা ভুলে যান। লাৎসিওতে যেখানে ১৭৭ ম্যাচে তাঁর ১২৩ গোল, ইতালির হয়ে ৪৬ ম্যাচে মাত্র ১৩টি। ৩১ বছর বয়সী ইমোবিলেতে তাই আশা হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে ইতালিয়ানও। মানচিনি অবশ্য এই দলে নেই। তাঁর তো ভালোই জানা, কোনো এক বিশ্বকাপের আগে পাওলো রসিকেও তো গোনায় ধরেনি কেউ।
আফছার উদ্দিন লিটন: অবশেষে অধরা ট্রফি আর্জেন্টিনাই পেলো। আর্জেন্টিনার শৈল্পিক ফুটবল খেলার জয় হলো। ফুটবল হলো শৈল্পিক ...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: অবশেষে ইতালির ৫৫ বছরের অবসান ঘটলো। অপেক্ষায় অপেক্ষায় কয়েক প্রজন্ম হারিয়েও গেছে। সেই অপেক্ষা ঘোচ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: স্পেন কোচ লুইস এনরিকের নিশ্চয়ই মনে পড়ছে সেই স্মৃতি! ইউরো ২০২০-এর সেমিফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ৬ জুলা...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও অবসর ভেঙ্গে আবারো খেলার �...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: প্রেমিকার নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ইতালিয়ান ঘরোয়া লিগ সিরিএ’ রেফারি ড্যানিয়েল ডি সান...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak