শিরোনাম
চট্টলার ডাক ডেস্ক: | আপডেট: ১২:২৪ এএম, ২০২০-১০-০২ 502
আলহাজ্ব মো. ফজল আহমদ
সাক্ষাৎকার
আলহাজ্ব মো. ফজল আহমদ। একজন বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। গেরিলা মুক্তিযুদ্ধের সাবেক কমান্ডার। স্কুল জীবন থেকেই প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার একজন যুগ্ম পরিচালক ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন সামাজিক ও গণসংগঠনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। চাকরি জীবনে প্রায় ৩২ বছর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক সংসদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন ‘বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সদস্য সচিব এবং চট্টগ্রাম প্রাতিষ্ঠানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লি. চট্টগ্রামের নির্বাচিত সভাপতি। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন-যাপন করলেও লেখালেখি এবং বই পড়া অব্যাহত রেখেছেন। সাক্ষাৎকারে তাঁর সাথে দেশের বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টলার ডাক পত্রিকার সম্পাদক আফছার উদ্দিন লিটন।
আফছার উদ্দিন লিটন: একজন পরিণত মানুষ হওয়ার জন্য সমাজে সংস্কৃতি চর্চার গুরুত ¡ কতটুকু ?
ফজল আহমদ : মানুষ হওয়ার পূর্বশর্ত শিক্ষা। সুশিক্ষা লাভের ভেতর দিয়ে মানুষকে স্বশিক্ষিত হতে হয়। এমনিভাবে মনোজাগতিক বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রত্যেক মানুষ সম্পৃক্ত হতে হয়। শিক্ষা-সংস্কৃতির কর্মকান্ডেই মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
আফছার উদ্দিন লিটন: আপনি লেখার সময় কোন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন ?
ফজল আহমদ : আমি একজন সচেতন দেশপ্রেমিক এবং একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। আমার চেয়ে আমার দেশ বড়। এদেশের জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। কাজেই দেশের জন্য মানুষের আত্মদান আমার মনকে উজ্জীবিত করে। কাজেই আমার হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাই আমার লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
আফছার উদ্দিন লিটন: আপনার লেখাতে সমাজের কোন বিষয়গুলো উঠে আসে ?
ফজল আহমদ : আমি সবসময় সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক শ্রেণি বৈষম্যকে চিন্তা-চেতনায় রেখে এই ধারায় লেখার চেষ্টা করি। সমাজের সামাজিক বৈষম্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের বিকল্প নেই।
আফছার উদ্দিন লিটন : ফেসবুক এবং অনলাইন ব্যবহারের দৌরাত্ম্যে বই প্রেমিরা বই পাঠে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে; আপনার মতে এর কারণ কী ?
ফজল আহমদ : বর্তমান সময়ে মানুষের বইপড়ার অভ্যাস ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তার মূল কারণ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ফেসবুক। বিশেষ করে ছাত্র-যুবসমাজ বইপড়া একেবারেই ভুলে গেছে। সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে তাদেরকে ব্যস্ত দেখা যায়। ঘুমের মধ্যে মোবাইল হাতে সারা রাত ফেসবুকে সময় পার করে দেয়। অন্যদিকে, ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতি যুবসমাজকে গ্রাস করেছে।
আফছার উদ্দিন লিটন : দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের কি করা উচিৎ ?
ফজল আহমদ : দেশে আজ দুর্নীতি সর্বস্তরে তথা অফিস-আদালতে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। দুর্নীতির কারণে সমাজে পচন ধরেছে। দুর্নীতি রোধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশ চরম দুর্নীতিগ্রস্ত পরিণত হবে। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, মুনাফাখোর, মজুতদার, টেন্ডারবাজরা সরকারি মালামাল ক্রয়ে এবং মেরামতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি করছে। এখনি তা রোধ করা না গেলে সামনে দেশের ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আফছার উদ্দিন লিটন : বর্তমানে দেশের প্রেক্ষাপটে যোগ্য জায়গায় যোগ্য মানুষ নেই। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ফজল আহমদ : মন্ত্রীপরিষদ, সাংসদ, জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে যোগ্য মানুষ বাছাই করা জরুরি। বর্তমান সময়ে যোগ্য মানুষের চেয়ে টাকাওয়ালা মানুষের কদর বেশি। যে কারণে অযোগ্য ব্যক্তিকে যেখানে নিয়োগ দেয়া হবে, সেখানে ব্যাপক দুর্নীতি হবে। নিরপেক্ষভাবে যোগ্য লোক বাছাই করে নিয়োগের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী সমৃদ্ধশালী উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে যোগ্য-মেধাবী লোকের কদর বাড়াতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
আফছার উদ্দিন লিটন : দেশের চাকরির বাজারে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মেধাবী তরুণদের নিয়োগে বড় ধরনের শূন্যতা রয়েছে। এতে যোগ্য স্থানে যোগ্যরা নিয়োগ পাচ্ছেনা ?
ফজল আহমদ : আমাদের দেশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বেড়ে যাওয়ায় চাকরির বাজারে মেধাবীদের সুযোগ খুব একটা হচ্ছে না। ফলে মেধাবীদের একটি অংশ উপযুক্ত চাকরি না পেয়ে হতাশ জীবন-যাপন করছে। মেধাবীদের অনেকেই আবার বিপথে চলে যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক গ্রহণ করে। কেউ কেউ সন্ত্রাসী হয়ে অন্ধকার জীবন নিয়ে পড়ে আছে। আবার কেউ কেউ জঙ্গি হয়ে মা-বাবার স্বপ্ন ভেঙ্গেছে। এর জন্য আজ দায়ি কারা? রাষ্ট্র নাকি সমাজ ব্যবস্থা ? চাকরির বাজারে মেধাবীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে সরকারি আমলাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে দুর্নীতিবাজদের। যারা দেশের মেধাবীদের যোগ্য জায়গায় আসুক চাইনা তাদেরও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থায় এমন একটি অপসংস্কৃতির রেওয়াজ চালু রয়েছে, যা জাতিকে মেধাশূন্য করতে যথেষ্ট। দেশের অপসংস্কৃতিময় সমাজ ব্যবস্থায় শুধু বড় লোকেরা শিক্ষা, বাসস্থান, খাদ্য, স্বাস্থ্য আইন ও রাজনীতিসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। অন্যদিকে, অসহায় গরিবেরা দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আফছার উদ্দিন লিটন : ভূমিদস্যুদের বেপরোয়া তান্ডবে খেলাধুলার পর্যাপ্ত মাঠ নেই দেশের প্রধান নগরগুলোতে; যার ফলে শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে তরুণদের ক্রীড়া ও বিনোদন চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার মতে সরকারের কি করা উচিত?
ফজল আহমদ : স্কুল-কলেজে বাধ্যতামূলক খেলাধুলার মাঠ থাকতে হবে। শিশু-কিশোরদের গড়ে তোলার জন্য তাদেরকে খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। কিন্তু নগরীতে খেলার মাঠ সংকটে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এতে দিন দিন তাদের মেধা ও মনন ভার্চুয়াল হয়ে যাচ্ছে। হাইব্রিড হয়ে যাচ্ছে। খেলার মাঠ রক্ষার জন্য ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সরকারকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু-কিশোরদের জন্য নগরীতে পর্যাপ্ত মাঠের ব্যবস্থা করে সক্রিয়ভাবে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে আরও ভাবতে হবে।
আফছার উদ্দিন লিটন : বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে কিছু জানতে চাই -------
ফজল আহমদ : একটি জাতির চালিকা শক্তি তার মায়ের ভাষা। একজন লোক তার মাতৃভাষায় যেভাবে মনের ভাষা প্রকাশ করতে পারে, অন্য ভাষায় তথা বিদেশী ভাষায় তা সম্ভব নয়। তাই পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠী দেশ ভাগের পর থেকে বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলাকে ধ্বংস করে উর্দুকে বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।
আফছার উদ্দিন লিটন : মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে কিছু জানতে চাই-------
ফজল আহমদ : ১৯৭১ সালে ৩০শে এপ্রিল সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে প্রবেশ করি। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে ভারতের আসাম সেনানিবাস এলাকায় লুধিয়ানা নামক স্থানে ভারতের ৫৬তম ব্রিগেড এর অধীনে গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আগস্ট মাসে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। আমি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, স্টেনগান, এলএমজি, এসএমজি, এসএলআর, এসকেটিএস, থার্টি সিক্স হ্যান্ড গ্রেনেড, দুই ইঞ্চি মটার, প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভের ব্যবহার, ইমপ্রোভাইজড গ্রেনেড বিস্ফোরণ, ডেমোলিশ ও আরসনিং এর বিভিন্ন কৌশল, নাইট রেইড, বেয়নেট ফাইট ইত্যাদির বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।
আফছার উদ্দিন লিটন : মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার যদি কোনো স্মৃতিচারণ থাকে----
ফজল আহমদ : ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ শেষে দেশে গিয়ে আমাদের গেরিলা দল ঘোষাল পাড়া যুদ্ধ, ইন্দ্রপুল উড়িয়ে দেয়। ধলঘাট স্টেশন দখল ও ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নকরণ। গৈড়লার টেকে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। পটিয়া থানায় পতাকা উত্তোলন ইত্যাদি স্মৃতি আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়।
আফছার উদ্দিন লিটন : বর্তমানে সময়ের প্রেক্ষাপটে আইনজীবীরা বাদি-বিবাদির কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করে মামলা দীর্ঘসূত্রিতা করছে। একজন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
ফজল আহমদ : আদালতে আইনী লড়াই নেই। দালালি আছে। বর্তমান আইন পেশার চরিত্র নেই। বিষয়টি মোটেও দেশের জন্য ভালো নয়। আইনজীবীদেরকে আইনী সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আরো মানবিক হতে হবে। সৎ হতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ আইনজীবীদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে।
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যে শব্দ গুলো প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের মানুষের আয় হ্রাস পাওয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জরিপ�...বিস্তারিত
আফছার উদ্দিন লিটন: সম্পাদকীয় ... আবরার হত্যা মামলায় আসামীদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কার্যকর হয়নি। ফেনীর নুসরাত হত্যা মামল�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: তুমি হৃদয় হাসান বাবু আমার একটা তুমি চাই, যেই তুমিতে প্রাণটা নাচে হাজার রঙ দেখতে পাই। আমার এক�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: তুমি অবিনশ্বর আলেয়া চৌধুরী শুভ সুন্দর প্রত্যয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে কিংবদন্তি তাজ সংগ্রামে সাহস...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতি বাবুল কান্তি দাশ দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতি উদ্বিগ্ন সবাই, হা-হুতাশে স�...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak