শিরোনাম
চট্টলার ডাক ডেস্ক: | আপডেট: ০৯:১৩ পিএম, ২০২৪-১০-১০ 189
সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্রহী থাকলেও শেষ পর্যন্ত আইয়ুব বাচ্চু লিড গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন। বাচ্চুর বয়স তখন সতেরো কি আঠারো। সেই সময় সোলসের সুর ও কম্পোজিশনের দায়িত্বে ছিলেন আরেক অসাধারণ মিউজিশিয়ান, নকিব খান। সোলসের প্রথম এলবাম প্রকাশের কিছুদিন পর নকিব খান ঢাকা চলে এলে সোলসে আবার শূন্যতা তৈরি হয়। সুর ও সংগীত পরিচালনা কে করবে, সেই প্রশ্ন সামনে চলে আসে।
বাচ্চু শুরু থেকেই দারুণ গিটার বাজাত। দেশি-বিদেশি গানের ওপর তার জানাশোনা ছিল বিস্তর। সবাই বাচ্চুকে সুর করার জন্য উৎসাহিত করল। মনে পড়ে, একদিন দুপুরে বাচ্চু এলো। সুর নিয়ে অনেক কথাবার্তার পর বলল, ‘জঙ্গী ভাই গান দিন, সুর করা শুরু করি।’ ওই দুপুরেই সৃষ্টি হলো ‘প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্ত কেন’ গানটি।
শুরু থেকেই দেখেছি, বাচ্চু সব সময় অল্পস্বল্প ইংরেজি গান গাইত। আরেকটা দিনের কথা মনে পড়ছে। একদিন চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির মাঠে বাচ্চুর সঙ্গে কথা হচ্ছে। আড্ডাপ্রিয় ছেলে বাচ্চু জমিয়ে কথা বলতে পারে। নানান কথায় বেশ জমেছিল সেদিনের আড্ডা। আমি তার কথা থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘তুমি বাংলা গান গাও না কেন?’ বাচ্চু বলল, ‘ভাই আমি গাইতে পারি নাকি?’ বললাম, ‘খুব পারো, ইংরেজি গান গাইতে পারলে বাংলা গানও গাইতে পারবে। শুরু করে দাও।’ বাচ্চু বলল, ‘ওকে, দেন তবে একটা গান লিখে। ওই সময়ে পকেট থেকে কলম বের করে লিখে ফেলি, ‘হারানো বিকেলে গল্প বলি/ সাগর তীর ধরে এগিয়ে চলি’। বলে নেয়া ভালো, বাচ্চু সেই বয়সেও অসাধারণ টেলেন্টেড একজন মিউজিশিয়ান ছিল। আমাকে চমকে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সুর করে ফেলল।
বাচ্চু প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়। বাচ্চু ২৪ ঘণ্টার মিউজিশিয়ান। কুশলবিনিময় দিয়ে কথা শুরু করত, কিন্তু কথা শেষ করত মিউজিক দিয়ে। যেখানেই যেত, সেখানে আগে থেকেই গিটার থাকত অথবা গিটার তার সঙ্গে যেত। একটা দিনের কথা বলি। সময়টা ঠিক মনে পড়ছে না। সোলসের সবাই এবং অন্যরা মিলে ফরেস্ট হিলে গিয়েছিলাম। সবাই খাবারের গল্পে ব্যস্ত। বাচ্চু আমাকে ডেকে, পাহাড়ের প্রান্তে নিয়ে গেল। নিজে বসল এবং আমাকেও বসাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার বাচ্চু? এখানে কী? কিছু বলবে?’ বাচ্চু জবাবে বলল, ‘জঙ্গী ভাই চারদিকে দেখেন কী সুন্দর প্রকৃতি।’ আমি বললাম, ‘তা বটে, কিন্তু ওদিকে যে ওরা সব খাচ্ছে...।’
বাচ্চু বলল, ‘চলেন আগে একটা গান করে নিই, আপনি লিখতে থাকেন আমি সুর করতে থাকি, পরে ওদিকে যাব।’ আমি হেসে বললাম, ‘তবে তা-ই হোক।’ একটা মুখরা লিখলাম, একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে/ মায়াবী সন্ধ্যায়/ চাঁদ জাগা এক রাতে/ একটি কিশোর ছেলে/ একাকী স্বপ্ন দেখে/ হাসি আর গানে/ সুখের ছবি আঁকে। এটুকু লিখে চারদিকে একবার চোখ বুলালাম। পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের দিকে নামা পথ, কিছুটা সমতলভূমি, অপূর্ব দৃশ্য। হঠাৎ চোখে পড়ল একদিকে ঘাস আর ঘাসের ওপর কিছু ফুল, বাতাসে দুলছে। বাচ্চুকে দেখালাম। বাচ্চু মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল। বাচ্চুকে বললাম, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’ আর একদিন লিখব, আজকে এই ঘাসের ওপর ফুলের দৃশ্য নিয়ে কিছু লিখি। বাচ্চু আমার চেয়েও অনেক বেশি উৎসাহী। বলল, ‘আপনি গান লেখা শেষ করতে পারলে, আমি এই বসাতেই সুর করে দেব।’ লিখলাম, কী জানি কী একদিন ছিল/ ঘাসেরও দোলায় ফুল ছিল/ এলিয়ে চুল তুমি ছিলে/ কি জানি কি এক দিন ছিল। বাচ্চু সুর করল। বলতে দ্বিধা নাই, গানের কথার চেয়ে বাচ্চুর সুর কয়েক গুণ বেশি ভালো হয়েছিল। ওই দিন আড্ডা গল্পে অংশগ্রহণ করা হয় নাই, কিন্তু বাচ্চুর উৎসাহে গান তৈরি হয়ে গিয়েছিল। গীতিকার সুরকার মাত্রই জানেন, একটি গান তৈরি হয়ে গেলে, যে আনন্দ পাওয়া যায়, তার সঙ্গে আর কোনো আনন্দের তুলনা হয় না।
প্রথম দিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে কাজ করলেও পরে এলিফ্যান্ট রোডের ব্লু-নাইল হোটেলে একপ্রকার স্থায়ীভাবেই বসবাস শুরু করেছিল। অর্থকষ্ট ছিল। সোলস থেকে অনুষ্ঠান বাবদ পাওয়া টাকা এবং এলবামের সুর ও এরেঞ্জমেন্ট থেকে যে টাকা আসত, চলা মুশকিল ছিল। তাই একসময় মগবাজারে এক রুমের একটা বাসা ভাড়া নেয়। অর্থকষ্ট থাকলেও বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে বাচ্চু হাসিমুখে সংগীত নিয়েই ব্যস্ত থাকত।
ঠিক এ রকম সময় বিটিভিতে একটি ব্যান্ড শোর আয়োজন করা হয়। ঠিক হলো অনুষ্ঠানে ফিডব্যাক ‘মেলায় যায়রে’ গাইবে একইভাবে মাইলস, রেনেসাঁসহ অন্য প্রধান ব্যান্ডগুলো তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলো গাইবে। সে সময় সোলসের বাংলা গান তপন চৌধুরী ছাড়া আর কেউ টেলিভিশনে গাইত না। তপন চৌধুরী সোলসে নাই। ঠিক হলো তাঁর জায়গায় বাচ্চু গাইবে। এটাই হবে টেলিভিশনে বাচ্চুর প্রথম গান গাওয়া। তাও আনঅফিশিয়াল একটি প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে। বাচ্চু চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিল। আমি ওই সময়ে ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম ছিলাম। বাচ্চু আর পার্থ চট্টগ্রামে ছিল। চট্টগ্রাম থেকে আমি, বাচ্চু ও পার্থ একটি মাইক্রোবাসে উঠলাম। সিদ্ধান্ত হলো, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’ গাওয়া হবে। মুখরা আগেই লেখা হয়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে আসতে দুটি অন্তরা লিখে ফেললাম। ঢাকা পৌঁছে সোজা হোটেল ব্লু-নাইলের ২১ নম্বর রুম। পরদিন টেলিভিশনে রেকর্ডিং। বাচ্চু গিটার তুলে নিল, পার্থ বসল কিবোর্ডে। শুরু হলো কম্পোজিশন। বিকেল, বিকেল গড়িয়ে রাত, সকালের দিকে সব ফাইনাল করে সোজা বিটিভিতে। গান করল বাচ্চু। সোলস ওই যাত্রায় নিজের নাম অক্ষুণ্ন রাখে আর বাচ্চু টেলিভিশনে তার প্রথম গানে নিজেকে নতুন পরিচয়ে তুলে ধরে। বুঝিয়ে দেয়, সে জয় করতে এসেছে।
একদিনের কথা। তারিখটা ঠিক মনে নেই। সোলস তখন তুঙ্গে, হোটেল ব্লু নাইলে সোলসের সভা চলছে, একসময় দেখলাম মন খারাপ করে বাচ্চু বেরিয়ে এল। আমার সঙ্গে সিঁড়িতে দেখা। বলল, ‘ভাই, সোলস ছেড়ে দিলাম।’ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বাচ্চু বলল, ‘আমি সোলস থেকে “এক দিন ঘুম ভাঙা শহরে” গানটি চেয়ে নিয়েছি।’ মন খারাপ বাচ্চুকে আমি জড়িয়ে ধরে কুন্দন রেস্তোরাঁয় বসালাম। আমাদের টেবিলে বন্ধু শহীদুল হক এসে যোগ দেয়। বাচ্চুকে সান্ত¡না দিয়ে বললাম, ‘তুমি জেনুইন মিউজিশিয়ান, তোমার চিন্তা কী? তুমি নতুন ব্যান্ড করো।’
লেখক : শহীদ উদ্দিন মাহমুদ জঙ্গী
#এইউ
আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: রাশিয়ায় মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার গ্রা...বিস্তারিত
© Copyright 2025 Dainik Chattalar Dak