শিরোনাম
আফছার উদ্দিন লিটন: | আপডেট: ০৯:২৫ পিএম, ২০২৪-০৩-১৭ 260
মুকুল জ্যোতি চাকমা
মুকুল জ্যোতি চাকমা। সদা হাস্যোজ্জ্বল নিরঅহঙ্কারী সাদা মনের একজন মানুষ। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে জন্ম তাঁর। বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। গ্রাম্যস্কুলে বাবার শিক্ষকতার কারণে পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতা তেমন ছিল না। পারিবারিক অসচ্ছলতা সত্ত্বেও তিনি লেখাপড়ায় ছিলেন যথেষ্ট মেধাবী ও আন্তরিক। অনেক কষ্ট করে তাঁকে লেখাপড়া করতে হয়েছ। একমাত্র ধৈর্য ও একাগ্রতার কারণে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের একজন বড় কর্মকর্তা। বলছিলাম--স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুরুক্ষা সেল বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো (দক্ষিণ কার্যালয়ের) উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমার কথা।
মুকুল জ্যোতির জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা:
মুকুল জ্যোতি চাকমা ১৯৬৯ সালে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বঙ্গলতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশোর কেটেছে তাঁর বঙ্গলতলী গ্রামে। পরিবারে পাঁচ সন্তানের মাঝে একমাত্র ছেলে সন্তান তিনি। তাঁর বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেও পরিবার আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। বাবা তুষার কান্তি চাকমা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তবুও পাঁচ ভাই-বোনের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে বাবাকে অনেক হিমশিম খেতে হতো। পরিবারের আয় বাড়াতে নিয়মিত কৃষিকাজ করতে হতো। ধান চাষ, জুম চাষ এবং বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করতে হতো। এসব সবজি নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অবশিষ্ট স্থানীয় বঙ্গলতলী বাজারে বিক্রি করার দায়িত্ব পড়ত মুকুল জ্যোতি চাকমার উপর।
পড়ালেখা:
মুকুল জ্যোতির শিক্ষাজীবন শুরু বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮৫ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলার রুপালি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮৭ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
সংগ্রামী শিক্ষাজীবনের গল্প:
বঙ্গলতলীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুকুল জ্যোতির শিক্ষাজীবন শুরু। ওই সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে তাকে পায়ে হেটে পাড়ি দিতে হতো প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি দুর্গম পথ। ওই সময়ে তাদের অঞ্চলে হাইস্কুলের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা মাত্র। রুপালি উচ্চবিদ্যালয়ে তার মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন কাটে। উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে তার পাড়ি দিতে হতো দুর্গম নয় থেকে দশ কিলোমিটার পথ। দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নৌকায় পাড়ি দিতে হতো কাচালং নদী।
কৈশোরে মুকুলের পড়ালেখার তেমন সুখস্মৃতি নেই। গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। রাতে কুপি জ্বালিয়ে পড়তে হতো। অনেক সময় কেরোসিন না থাকায় পড়ালেখায় ব্যাঘাত হতো। মাধ্যমিক পড়া শেষে বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে পলিটেকনিকে পড়ুক; কিন্তু মুকুল জ্যোতির আগ্রহ কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। শেষে ভর্তি হলেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে। গ্রাম থেকে এসেছে বলে জেলা সদরের কলেজ ছাত্ররা তেমন পাত্তা দিত না তাঁকে। তাঁর পোশাকেও ছিল গ্রাম্য ভাব। শহরের ছেলেদের মতো দামি পোশাক পরতে পারতো না কখনো--তাই আক্ষেপ থাকতো।
১৯৮৭ সালে রাঙামাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মুকুল জ্যোতি। এবার উচ্চশিক্ষার পালা। কিন্তু তখন পরিবার ছিল চরম আর্থিক সংকটে। তখন পার্বত্য এলাকায় অশান্ত ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজমান ছিল; আর অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে টাকার দরকার ছিল মুকুলের। এমন খারাপ অবস্থার মধ্যে নিকটআত্মীয় ডা. স্নেহ কান্তি চাকমার আর্থিক সহযোগিতা ও নিজের উদ্দীপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছিলেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও আবাসিক অসুবিধার কারণে পড়া হয়নি। পরে ইতিহাস ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান কিন্তু তিনি ইচ্ছা করে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে মজার জীবন কাটিয়েছেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের ৪৩৭ নং রুমে থেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দীর্ঘ পাঁচ বছর। বাবা মাসে ১২ শত টাকা পাঠাতেন, এই টাকায় পুরো মাস চালিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হতো। ডাইনিংয়ে খেতেন কম দামে। পরে ভালো রেজাল্ট করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৩০০ টাকা মাসিক শিক্ষাবৃত্তি পেতেন। এভাবে তিনি অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
সংগ্রামী চাকরি জীবন:
মাস্টার্স পাস করার পর এবার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পালা। কিন্তু এদিক-ওদিক অনেক চেষ্টার পরও চাকুরি মেলেনি তাঁর। শিক্ষিত বেকার হয়ে কাটিয়েছেন দুইবছর। ১৯৯৭ সালে একটি ইলেট্রনিক কোম্পানিতে মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের চাকরি নেন। সেলসম্যানের চাকরি ছিল মাত্র আট মাস। আবার বেকার। মুকুল চিন্তা করলেন, মরিবাঁচি অন্তত; বিসিএস পরীক্ষাটা দিই। কিন্তু মাস্টার্স পাস করেও বেকার-- ঢাকায় থাকা, খাওয়ার জায়গা নেই। বাবার কাছে টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে। থাকা-খাওয়ার চুক্তিতে এক আত্মীয়ের ছেলেকে টিউশনি পড়াতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি নিতে থাকেন বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি।
১৯৯৯ সালে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি পান। তার ইচ্ছা সরকারের বড় জায়গায় কাজ করা। তাই চাকরির পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০০০ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে। ২০১২ সালে উপ-পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রো উপ অঞ্চলে উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েছেন। একইসাথে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন বেশ সফলতা ও সুনামের সঙ্গে।
সম্মাননা:
মুকুল জ্যোতি চাকমা ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড ও জার্মানীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। পেশাগত কোর্সে সফলতার জন্য পেয়েছেন অনেক সনদ ও সম্মাননা। বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী এলাকার একজন কৃতি সন্তান হিসেবে পেয়েছেন এলাকার জনসাধারণ থেকে অসংখ্য সন্মাননা ও সংবর্ধনা।
পারিবারিক জীবন:
পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জয়ন্তী খীসার (দীশা) সঙ্গে। পারিবারিক জীবনে তিনি এক মেয়ে ও দুই ছেলের জনক।
-লেখক ও সংবাদকর্মী
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যে শব্দ গুলো প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি পদ্ধতি ০ ওজন হ্রাস করুন। ০ দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। ০ দৈনিক ৩০ ম�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ নিয়ন্ত্রণে না আনলে লিভারে...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: হঠাৎ হার্ট এটার্ক হলে বাঁচবেন কিভাবে? মনে করুন, সন্ধ্যা ছয়টার সময় একা একা বাড়িতে বসে আছেন। বাসার মা�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: মাদকাসক্তি, যৌন নিপীড়নের শিকার আর স্কুলে সহপাঠীদের বেদম মার খাওয়া- চেস্টার বেনিংটনের গল্পের শুরু�...বিস্তারিত
আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak