শিরোনাম
বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ | আপডেট: ০১:১৩ এএম, ২০২৩-১০-২৯ 348
১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে পিতা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার, মাতা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার’র ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতা ড. খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯১৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে। এরপরে তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩০ সালে আইএ পাস করেন। বিএ পাস করার পর তিনি চট্টগ্রামের নন্দনকানন অর্পণাচরণ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। স্কুলের শিক্ষকতায় যোগদানের পরই মূলত তিনি মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হন। কলেজে পড়া অবস্থায় তৎকালীন ‘দীপালি সংঘে’র নেত্রী লীনা নাগের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী থাকাকালে কল্যাণী দাসের নেতৃত্বাধীন ছাত্রীসংঘের সদস্য হন।
১৯৩০ সালে সমগ্র বাংলা জুড়ে অনেক বিপ্লবী দল সংগ্রামরত ছিল। ঐসব দলের সদস্যরা বিশ্বাস করত যে, কেবল সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জিত হতে পারে। স্বাধীনতা সংগ্রামের গোপন দলিলপত্র পাঠ থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হন। প্রীতিলতা সূর্যসেনের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী দলের প্রথম মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন প্রীতিলতা। আগের দিন রাতেই চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের দীর্ঘ পরিকল্পিত আক্রমণে ধ্বংস হয় অস্ত্রাগার, পুলিশ লাইন, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন। এটি “চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ” নামে পরিচয় লাভ করে। চট্টগ্রামের মাটিতে বিপ্লবী দলের এই উত্থান সমগ্র বাংলার ছাত্রসমাজকে উদ্দীপ্ত করে।
বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায় (যিনি পরবর্তীতে ক্যাবলা’দা নামে পরিচিত) নারী বিপ্লবীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। যুব বিদ্রোহের পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে বন্দী নেতাদের সাথে আত্মগোপনে থাকা সূর্য সেনের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতো। বিপ্লবী কল্পনা দত্তের সহায়তায় প্রীতিলতার দেখা হয় মাস্টারদা ও বিপ্লবী নির্মল সেনের সঙ্গে। তার কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ লাভ করেন। জেলে থাকা বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করে চিঠির আদান-প্রদান, কলকাতা থেকে বিস্ফোরক বহন করে আনার জন্য মাষ্টারদা নারী বিপ্লবীদের এসব কাজের দায়িত্ব দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কারণ সেসময় গোয়েন্দা বিভাগ মেয়েদের সন্দেহ করতো না। মাস্টার দার অনুমতি পাওয়ার পর নারীদের বিপ্লবের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা হয়।
১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি হয়। এই ঘটনা প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। তাঁর ভাষায় “রামকৃষ্ণদার ফাঁসীর পর বিপ্লবী কর্মকান্ডে সরাসরি যুক্ত হবার আকাক্সক্ষা আমার অনেক বেড়ে গেল।”
১৯৩২ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দুই বছর অতিক্রম হয়ে গেল। বিপ্লবীদের অনেকেই নিহত এবং অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই বছরগুলোতে আক্রমণের নানা পরিকল্পনার পরেও শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীরা নতুন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এসব পরিকল্পনার মূলে ছিলেন মাস্টার দা এবং নির্মল সেন। এই দুজন আত্মগোপণকারী বিপ্লবী তখনো গ্রাম থেকে গ্রামে বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যান।
১৯৩২ সালের ১০ আগস্ট শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাত জনের একটা দল ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। শৈলেশ্বর চক্রবর্তী পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁকে গভীর রাতে কাট্টলীর সমুদ্রসৈকতে সমাহিত করা হয়েছিল।
মাস্টারদা ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবার ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নারী বিপ্লবীদের ওপর দেবেন বলেন মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু সাত দিন আগেই পুলিশের হাতে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত ধরা পরে গেলে আক্রমণে নেতৃত্বের ভার পড়ে একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার ওপর।
২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতাকে পাঞ্জাবি ছেলেদের মতো পোশাক পরানো হয়েছিল। আক্রমণে অংশ নেওয়া বিপ্লবী কালী কিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তীর পোশাক ছিল ধুতি আর শার্ট। লুঙ্গি আর শার্ট পরনে ছিল মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন। বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ করলো, প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেয়ার পরেই ইউরোপিয়ান ক্লাবকে ঘিরে ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাবে কম্পন ধরিয়ে দিল বিপ্লবীরা। ইংরেজ অফিসাররাও পাল্টা আক্রমণ করলো। একজন মিলিটারি অফিসারের রিভলভারের গুলিতে প্রীতিলতার বাঁ-পাশে গুলির আঘাত লাগে। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটার সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। ধরা পড়ার আগেই সঙ্গে থাকা সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন তিনি। মাত্র ২১ বছর বয়সে আত্মদানের ইতিহাস রচনা করে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন প্রীতিলতা।
সংগ্রামী, সৎ, সাহসী, নিষ্ঠাবান দেশপ্রেমিক এক মহীয়সী নারী বাঙালির ইতিহাসে প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। যে বাঙালি নারী আজীবন গৃহের কোণে পড়ে থাকে কেবলই সাংসারিক কাজকর্মে মনোযোগী হয়, সেই নারীকে তিনি চিনিয়েছেন দেশের জন্য, বিপ্লবের জন্য একটি জীবনকে কতোখানি মহিমান্বিত করা যায়। কী করে গর্জে ওঠা যায় শোষকের বিরুদ্ধে। তাই তো তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। আজো যখন বাঙালি নারীর অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেয়া হয়, দেশপ্রেম, আদর্শ আর বিপ্লবের কথা লেখা হয় সবার আগে, আসে প্রীতিলতার নাম। আজকের প্রতিটি নারীর উচিত প্রীতিলতাকে কে অনুসরণ করে, তার নির্ভিকতাকে অনুসরণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। মেয়েরা যখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখবে ঠিক তখনি দেশ থেকে নারী বৈষম্য ও নির্যাতনের কালো হাত দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে নিপাতিত হবে, দেশটা আবার সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
বাঙালি নারীকে তিনি শিখিয়েছিলেন এক জন্মের কর্মে কেমন করে থেকে যেতে হয় মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। তাই তো তিনি অগ্নিকন্যা। প্রীতিলতার শৌর্য ও সাহস ও আদর্শ নিষ্ঠা এ দেশের মেয়েদের কাছে এক অমূল্য উত্তরাধিকার যা নারীদের জন্য আলোকবর্তিকার নতুন রূপ। প্রীতিলতার অমর জীবন হতে এই দেশের মেয়েদের তার অবিচল আদর্শ নিষ্ঠার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক :
প্রাবন্ধিক, সাবেক কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ-সভাপতি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ’৭১ , সভাপতি, চট্টগ্রাম প্রাতিষ্ঠানিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমবায় সমিতি লিঃ। সভাপতি, বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর।
#এইউএল
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যে শব্দ গুলো প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের মানুষের আয় হ্রাস পাওয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জরিপ�...বিস্তারিত
আফছার উদ্দিন লিটন: সম্পাদকীয় ... আবরার হত্যা মামলায় আসামীদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কার্যকর হয়নি। ফেনীর নুসরাত হত্যা মামল�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: তুমি হৃদয় হাসান বাবু আমার একটা তুমি চাই, যেই তুমিতে প্রাণটা নাচে হাজার রঙ দেখতে পাই। আমার এক�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: তুমি অবিনশ্বর আলেয়া চৌধুরী শুভ সুন্দর প্রত্যয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে কিংবদন্তি তাজ সংগ্রামে সাহস...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতি বাবুল কান্তি দাশ দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতি উদ্বিগ্ন সবাই, হা-হুতাশে স�...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak