আজ  বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪


স্বপ্ন ও সম্ভাবনাময় স্বর্ণযুগের দ্বার উন্মোচন ‘‘বঙ্গবন্ধু টানেল’’

  বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ   |   আপডেট: ০১:০০ এএম, ২০২৩-১০-২৯    459

 

স্বপ্ন ও সম্ভাবনাময় স্বর্ণযুগের দ্বার উন্মোচন ‘‘বঙ্গবন্ধু টানেল’’

পদ্মা সেতুর পর দেশের আরেকটি বড় অর্জন দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম টানেল ‘‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’’। যেটি দেশের এবং বিদেশের বহু শ্রমিকের অক্লান্ত শ্রমে ইতোমধ্যে পূর্ণতা লাভ করেছে যা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাত ধরে ২৮ অক্টোবর ২০২৩ শুভ উদ্বোধন হয়েছে।


 ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেল বোরিং মেশিনের সাহায্যে প্রথম টিউবের খনন কাজ উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল টানেলের মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি ৩৫ ফুট। সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। মূল টানেল ছাড়াও রয়েছে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি উড়াল সেতু। টানেলটির একটি অংশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে অপর প্রান্তের আনোয়ারা অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে।

 টানেলের উত্তর প্রান্ত থেকে পাঁচটি সড়ক আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাঠগড় সড়ক, এয়ারপোর্ট সড়ক ও পতেঙ্গা সৈকত সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে। অন্যদিকে নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল ও পারকি সমুদ্রসৈকত এবং আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজার, বাঁশখালী, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সাথে যুক্ত হয়েছে সুন্দর একটি যোগাযোগের সেতুবন্ধন। স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া ইতিমধ্যে অনেকাংশই দৃশ্যমান। এ টানেল ধরেই কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে এবং নির্মাণাধীন এই সড়কের দুপাশেই শিল্প কারখানা এবং আবাসনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

মিরসরাই থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত একটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান যেটি সম্পন্ন হলে যানবাহনের চলাচল অত্যন্ত দ্রুত ও সহজতর হবে। এরই ধারাবাহিকতায় সাগরিকা থেকে টানেল পর্যন্ত সাগরপাড়ে রিং রোড নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা-হালিশহরে আউটার রিং রোডটি কাজ করবে টানেলের এপ্রোচ সড়ক হিসেবে। নগরী থেকে টানেল অতিক্রম করে কক্সবাজার যাওয়া যাবে আনোয়ারা উপজেলা হয়ে। চীনা ইকোনমিক জোন বাস্তবায়িত হলে আনোয়ারা থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি চলে যাবে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম প্রকৃত অর্থেই তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।


ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে দূরত্ব ও খরচ কমে যাবে এবং সময় সাশ্রয় হবে। এক্ষেত্রে এ পথের গাড়িগুলোকে আর চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে হবে না। যার ফলে চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমে আসবে। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রকল্পটি এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অনন্য মাত্রা দেবে। টানেলকে ঘিরে দেশের নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। সেই সঙ্গে হাজারো সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে প্রত্যাশা আপামর জনসাধারণের। আগামীতে কর্ণফুলী টানেলকে ঘিরে চীনের সাংহাই সিটির মতো চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। যার ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাবে। সর্বোপরি এই টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপোযুগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থারও আধুনিকায়ন হবে।

চট্টগ্রাম পোর্টের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজেও গতি আসবে। পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্বপ্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজিকরণ, আধুনিকায়ন, শিল্পকারখানার বিকাশ সাধন এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প নির্মিত হলে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলব ফেলবে।  

দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হৃদপিন্ড বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে বানিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও আজো কার্যত বানিজ্যিক রাজধানী হয়ে উঠেনি চট্টগ্রাম। বঙ্গবন্ধুকন্যার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের ফলে আমূল পরিবর্তনের সাথে সাথে কার্যকর বানিজ্যিক রাজধানীতে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, যেটি চট্টগ্রামবাসীদের জন্য অহংকারের বিষয়। চট্টগ্রামের সাথে পার্বত্য জেলাসমূহ এবং পর্যটননগরী কক্সবাজারকে ঘিরে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনার সরকার। এ পরিকল্পনার আওতায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলীর ওপাড়ে কোরিয়ান ইপিজেড, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি বিদ্যুকেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে আগামী দিনে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে।

কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার ফলে এলাকার আশেপাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে এই স্বাধীন বাংলাদেশে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।


লেখক : প্রবন্ধকার ও মুক্তিযোদ্ধা
সাবেক কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ড, চট্টগ্রাম।
সাবেক যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

#এইউ

 

 

 

 

 

 

রিলেটেড নিউজ

কিভাবে আপনার ফেসবুক আইডি সুরক্ষিত রাখবেন?

আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত


ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন তারা কী করবেন?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত


তুমি জেনুইন মিউজিশিয়ান তোমার চিন্তা কী?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্র...বিস্তারিত


পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি

চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি  “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত


সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র কসোভো

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত


রাশিয়ায় ইসলামের প্রসার ঘটছে

চট্টলার ডাক ডেস্ক: রাশিয়ায় মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার গ্রা...বিস্তারিত