আজ  শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪


দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা স্বাক্ষ্য প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছেন কেন?

  আফছার উদ্দিন লিটন:   |   আপডেট: ০১:৪৭ পিএম, ২০২৩-১০-০১    837

 

দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা স্বাক্ষ্য প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছেন কেন?

দুদক! সরকারি এক রহস্যময় সংস্থা! যাদের দুর্নীতির খবর প্রায়শ বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চাউর হতে দেখা যায়। সম্প্রতি আমি সরেজমিনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বেশ কয়েকবার বেশ কিছু দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষ্য প্রদানে ব্যর্থ হতে দেখেছি। আসলে তারা কেন এবং কি কারনে আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে?
বলছি। ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর আমি দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে ২৫ জন সহ আরও বেশ কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দাখিল করি। অভিযুক্তদের অপরাধÑতারা আমার পিতার ৬০ বছরের দখলকৃত জায়গায় পরস্পরের যোগসাজশে অস্থিত্বহীন কাল্পনিক দুজন নারী লুৎফুন নাহার ও মিন আরা বেগম এবং অস্থিত্বহীন কাল্পনিক ব্যক্তি মো. মুরাদ খানের নামে ভুয়া আবেদনের মাধ্যমে ভুয়া বরাদ্দপত্র লাভ করে। পরবর্তীতে তারই ধারাবাহিকতায় আমার অভিযোগের মূল মাস্টারমাইন্ড মো. জানে আলম, চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রেনচালক মো. আজম খান, আলহাজ নাজিম উদ্দিন, আবুল কালাম আবু, ষড়যন্ত্রের নকশা আকে। পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করে। তাদের সাথে সম্পৃক্ত হোন খাজা আবদুল কাইয়ুম, একে আজাদ নান্নু, ডিস আজাদ, মো. আনোয়ার, রামপুরের মো. সেকান্দরসহ আমাদের নতুন মনছুরাবাদ এলাকা ও বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি। এরপর চক্রটি জাল-জালিয়াতিতে সক্রিয় হয়। আবুল কালাম আবু ব্যতীত এখানে সবাই বিএনপি।


অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. জানে আলম, চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রেনচালক মো. আজম খান, আলহাজ নাজিম উদ্দিন, আবুল কালাম আবুদের পেছনে আরও একটি মাস্টারমাইন্ড টিম রয়েছে। এরা কারা? এরা হলো ভালো মানুষধারী এলাকার মুখোশধারী কিছু ব্যক্তি। এ তালিকায় প্রথমে রয়েছে ভূমিদস্যু আলহাজ আবু তাহের, লালসালু মঞ্জু, দিদার আলম, খোরশেদ কবির, বিএনপি নেতা হামজা আমির খসরু, শফি বাঙালি প্রমুখ।


প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন আহমেদ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পাস হয়ে আসা মাত্র আমাকে ফোন করে আমাকে দেখা করতে বলেন। তারপর দিন আমি দুদক চট্টগ্রাম অফিসে গেলাম। তাঁর সাথে কুশল বিনিময়ের পরে তিনি আমার কাছে যা যা জানতে চেয়েছেন। আমি তা সব বলেছি। আমি রইস উদ্দিন সাহেবকে বললাম, আপনি যদি আমার কাছ থেকে এ অভিযোগ সর্ম্পকে অধিকতর জানতে চানÑতাহলে আমাকে নোটিশ করুন।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন আহমেদ ২০১৬ সালের ২২ জুন আমার নামে লিখিত এবং মৌখিক সাক্ষী দেয়ার জন্য নোটিশ করে। এরপর দিন ২০১৬ সালের ২৩ জুন আমি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন আহমেদ এবং তৎকালীন দুদকের পরিচালক আবদুল আজিজ ভুইয়াকে নোটিশের লিখিত জবাব দিই। প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন আহমেদ আমার দরখাস্ত, নোটিশের সাথে সংযুক্তি দেয়া সকল কাগজপত্র ও চট্টগ্রাম হাউজিং অফিসের জব্দকৃত নথি পর্যালোচনা করে আমাকে নোটিশের রিসিভিং দেয় ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট।
যেদিন নোটিশের জবাব দিই সেদিন রইস উদ্দিন আহমেদ আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জানতে চেয়েছেন চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ থেকে কি কি চাইতে হবে? --আমি বললাম, আপনি তাদের কাছ থেকে আকবরশাহ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে নতুন মনছুরাবাদ এলাকায় ১ থেকে ১১টি তথাকথিত সরকারি প্লট দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে ভূমিদস্যুরা কিভাবে পেয়েছেন তা রিকুজিশন লেটার দিয়ে তলব করতে পারেন। এরপর তিনি আমার কথায় মোটিভেটেড হয়ে চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এস্টেট অফিসার) মো. নাসির উদ্দিনের কাছে রিকুজিশন লেটার দিয়ে ওই ১১টি প্লটের নথি চাইলে তিনি ফিরোজশাহ হাউজিং এস্টেটের পরিবর্তে হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ১১টি প্লটের নথি দেন। সেদিন ওই ১১টি নথি রশি দিয়ে বাঁধা থাকার কারণে রইস উদ্দিন সাহেব ভালো করে দেখেনি। রইস উদ্দিন সাহেব প্রথম যেদিন জিইসি মোড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম হাউজিং অফিসে ১১টি প্লটের নথি জব্দ করতে যান; সাথে করে আমাকে এবং কনস্টেবল ফিরোজ মাহমুদকে নিয়ে যান। আমাদের দুজনকেও ওই ১১টি প্লটের নথি ঠিক আছে কিনা দেখতে বলেনি! অফিসে নিয়ে তিনি যখন নথিগুলো খুলে দেখেন--তখন তিনি বুঝলেন চট্টগ্রাম হাউজিং অফিসের ওই অসাধু কর্মকর্তা তার সাথে মশকরা করলেন!


এক সপ্তাহ পর তিনি আমাকে নিয়ে আবার চট্টগ্রাম হাউজিং অফিসে ১১টি প্লটের নথি জব্দ করতে যান। তবে সেদিন এস্টেট অফিসার নাসির উদ্দিন তাঁর সাথে মশকরা করেনি। রইস উদ্দিন সাহেব এস্টেট অফিসারের কাছ থেকে নথিগুলো বুঝে নিয়ে স্বাক্ষর করে চলে আসেন। তবে ১, ২, ৩ নং প্লটের নথির বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই তিনটি প্লটের মালিকানা দাবি করছেন দুর্নীতিবাজ ভূমিদস্যু আবুল কালাম আবু। তিনি আমাদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী প্রকৌশলী ও এস্টেট অফিসার বরাবর আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন। তাই এ তিনটি নথির বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার কারণে দেয়া যাবে না। রইস উদ্দিন সাহেব এরপর দিন অফিসে বসে ওই তিনটি নথি বাদে ৮টি নথি পর্যালোচনা করে দুদকে দাখিল করা আমার দরখাস্ত, নোটিশের প্রেক্ষিতে লিখিত জবাব, আমার পিতা আবদুল খালেকের নামে ১৯৭৭ ইংরেজির ১৯ ডিসেম্বর ২৭৬৮ নং স্মারকের প্রেক্ষিতে নামমাত্র কিছু টাকায় ১৯৭৮ সালের ১৭ জানুয়ারি অস্থায়ীভাবে তৎকালীন চট্টগ্রাম গৃহ-সংস্থান অধিদপ্তর ইজারা প্রদান করার কাগজপত্র এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ পাওয়ার আবেদনের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তিনি আমাকে বলেন, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১নং প্লট বরাদ্দে যারা দুর্নীতি-অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির সাথে জড়িত তাদেরকে নোটিশ করে ডাকবো। তাদের কাছ থেকে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইবো।


রইস উদ্দিন ৮টি প্লটের দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকলেও তিনি বেছে বেছে তার ইচ্ছামতো ১০ থেকে ১৫ জনকে নোটিশ করেছেন। ৫, ৬ নং প্লটের অভিযুক্তদের কেন নোটিশ করেনি তা রহস্য থেকে গেল। ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১ নং প্লটের অভিযুক্ত ১০ থেকে ১৫ জনকে নোটিশ করে চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে ডেকেছেন। আমার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনেছেন এবং নিয়েছেন।
রইস উদ্দিন অভিযুক্তদের নোটিশ করার এক সপ্তাহ পর আমাকে আবার ডাকলেন। ডেকে তিনি জানতে চাইলেন--এ অভিযোগ সর্ম্পকে আমি কি চাই? সেদিন তার প্রশ্ন করার ধরনটি ছিল এমন--“আপনি কি চান? তাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। দেখি আপনাকে কিছু নিয়ে দিতে পারি কিনা?”


“আমি সেদিন রইস উদ্দিন সাহেবকে বললাম, আপনি কি চান মানে আমি বুঝলাম না? যদিও বিষয়টি নিতান্ত সহজ। বুঝে না বোঝার ভান করলাম। তাকে প্যাচাতে লাগলাম।”


“মানে আপনি টাকা-পয়সা বা অন্যকিছু চান কিনা?”


“আমি বললাম, আগে ন্যায়বিচার চাই। ন্যায়বিচার পেলে টাকা-পয়সা কিংবা ভাগ-বাটোয়ারার হিসাব আসবে।”
“তাহলে আপনি টাকা চান না?”
“না। আমি এ মুহূর্তে টাকা চাই না।” এরপর আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম। “আপনি যাদেরকে নোটিশ করেছেন; তারা কি সবাই এসেছে?”
“হ্যা, এসেছে। অভিযুক্তদের সাথে আপনার চাচাতো ভাইয়েরাও এসেছেন। আপনার একজন চাচা ঢাকা থেকে আমাকে ফোন করেছেন। দুর্নীতিবাজ ভূমিদস্যু আবুল কালাম আবুও এসেছেন। শুধু জানে আলম, আজম খান, আলহাজ নাজিম উদ্দিন আর আবুল কালাম আবুরা যে আপনাদের ক্ষতি করেছে তা নয়Ñতাদের চাইতে বেশি ক্ষতি করেছে আপনার চাচা এবং চাচাতো ভাইয়েরা।”
“এরপর রইস উদ্দিন সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম-অভিযুক্ত জানে আলম, আজম খান ও নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে ভুয়া আবেদনকারী ও ভুয়া বরাদ্দগ্রহীতা লুৎফুন নাহার, মিন আরা বেগম ও মুরাদ খানের এনআইডি এবং বিয়ের কাবিননামা চাননি?”
“হ্যা, চেয়েছি। তারা কিছুই দেখাতে পারেনি। তাদেরকে সরাসরি হাজির করতেও বলেছি। তারা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দেখাবে কি করে? আবেদনকারী ও বরাদ্দগ্রহীতারা তো ভুয়া, অস্থিত্বহীন।”
“আচ্ছা, অভিযুক্ত আজম খান চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি করে--এ কথা কি সঠিক?”
“হ্যা, ঠিক।”
“তাহলে আপনি তদন্ত প্রতিবেদনে লিখবেন না?”
তিনি নিশ্চুপ। বোঝা যায় অভিযুক্তদের কাছ থেকে অনেক টাকা পেয়েছে। সন্দেহ বেশি লাগায় তারপর আমি আবার রইস উদ্দিনকে জেরা করা শুরু করলাম।
“ আপনার খসড়া করা তদন্ত প্রতিবেদনে মূল মাস্টারমাইন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী আলহাজ নাজিম উদ্দিন নেই কেন?”
রইস উদ্দিন আবারো নিশ্চুপ। তবে এবার একটু মুখ খুলেছে। এ প্রসঙ্গে রইস উদ্দিনের ভাষ্য হচ্ছে, আলহাজ নাজিম উদ্দিন অভিযুক্ত পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সৃজনকারী আজম খান থেকে হস্তান্তর দলিল, রূপান্তর দলিল, লিজ দলিল মূলে ৯ ও ১০ নং প্লট ক্রয় করেছেন।


“তারপর আমি তদন্ত কর্মকর্তা রইস উদ্দিনকে বললাম, এদের যদি ভুয়া আবেদন, ভুয়া বরাদ্দপত্র, ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি দলিল, ভুয়া হস্তান্তর দলিল, ভুয়া রূপান্তর দলিল, ভুয়া লিজ দলিল ও ভুয়া সাব-কবলা দলিল হয়Ñতাহলে আলহাজ নাজিম উদ্দিন কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় ৯ ও ১০ নং প্লটের জায়গার মালিক এবং দখলদার হোন?”


এবার তিনি আমাকে জারি দিয়ে বলেন-“ বেশি কিছু জানতে চাইয়েন না!”


“ আপনি অভিযুক্ত আলহাজ নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন?”


এ প্রশ্নের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আর কথা বলেনি। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যে তিনি বিপদে পড়বেন; তা তিনি ভালো করে জানেন। যার দৃষ্টান্তমূলক উদাহরন বাছির উদ্দিন। এরপর রইস উদ্দিন আমাকে খসড়া করা তার তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে পড়ে শোনালেন। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে তিনি অবসরে চলে যান। রইস উদ্দিন অবসরে যাওয়ার আগে আমার অভিযোগটি ৬০ ভাগ তদন্ত করেন। তিনি আমার অভিযোগটি ৬০ ভাগ অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন লিখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করে পৃথক পৃথক তিনটি মামলা করার অনুমোদন চাইলে কমিশনার তদন্ত ৯, ১০ ও ১১ নং প্লটের বরাদ্দ কমিটির বিষয়ে তার কাছ থেকে কোয়ারি চাই।


রইস উদ্দিন অবসরে গেলে আমার অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব অর্পিত হয় উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল আউয়ালের উপর। তিনি আরও ৩০ ভাগ অনুসন্ধান করে আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের খুলশী থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার সময় দুদকের একটি টিম দুটি পাজেরো গাড়ি করে বড়পোল ও ছোটপোল এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে আসামি জানে আলম ও আজম খানের হদিস পাওয়া যায়নি। অভিযানে তাদেরকে বাসায় না পাওয়ার কারণে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এদিকে চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এস্টেট অফিসার এম সাদেক হোসেন ঢাকা নাকি খুলনায় অবস্থান করছেন দুদক তাও নিশ্চিত হতে পারেনি। বিকাল সাড়ে চারটার সময় পরিচালকের পিএস শফিকুল ইসলাম আমাকে খুশির খবর দেন। তিনি জানান, বিকাল চারটার সময় আসামি জানে আলমকে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল দুদক অফিসে ফোন করে ডেকে এনে গ্রেপ্তার করেন। তখন আসামি জানে আলম ও তার ছেলে ছাগির আলম দুদক অফিসে কান্নাকাটি শুরু করেন।
এরপর আসামি জানে আলমকে আদালতে তোলা হয়। সেদিন বিচারক তাকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন। জানে আলম অনেক দিন জেল কাটেন। জেলে থাকা অবস্থায় আসামি জানে আলম তার আইনজীবীর মাধ্যমে দফায় দফায় জামিন চাইলে নিম্ন আদালত তা নামঞ্জুর করেন। পরে আসামি জানে আলম হাইকোর্টে গিয়ে বণ্ডের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে জামিন নিয়ে আসে। ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ দুদকের তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর অজ্ঞাত কারণে ২০২০ সালে করোনা শুরু হওয়ার আগে তিনি এমেরিকায় চলে যান।


২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। সেদিন আদালতে দুদকের বিশেষ মামলা নং৩৩/২২ এবং কাস্টমসের কর্মচারি মো. রফিকুল ইসলামের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। সেদিন বিচারক দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল এবং উপ-পরিচালক আলী আকবরের কাছে যেসব বিষয় জানতে চেয়েছেন--তারা দুই-একটি প্রশ্ন বাদে এর কোনোটাই ভালোভাবে জবাব দিতে পারেনি। এ নিয়ে কোর্টে হাসির রোল পড়ে যায়। আদালতের এজলাসে থাকা মানুষজন বলাবলি করছে দুদক কিভাবে অথর্ব এবং মদন মার্কা মানুষ নিয়োগ দিয়েছে! এরা তো সরকারের বেতন-ভাতা তুলে তুলে খাচ্ছে।


জনগণের জন্য, দেশের জন্য, বিচারপ্রার্থীদের জন্য কি করছে? দুদকের কর্মকর্তারা যখন আদালতে সাক্ষী দিতে আসে তখন বোঝা যায় তারা কতটুকু সৎ আর কতটুকু অসৎ। তারা যখন কাটগড়ায় সাক্ষ্য দিতে যায় তখন তাদের নীরবতা দুদকের দুর্নীতির কথা ইঙ্গিত করে। আদালতের এজলাসে থাকা বিচারপ্রার্থীরা সেদিন মন্তব্য করছে--দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা আসামি পক্ষ থেকে মোটা অঙ্কেও টাকা খেয়ে সাক্ষী দিতে এসে নাটক করছে। বিচারকের কাছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা এমন ভাব ধরেছে যেনো তারা ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না।


দুদকের মামলার আসামি হালিশহর বড়পোল এলাকার বাসিন্দা জানে আলম সেদিন আদালতে উপস্থিত ছিল না। আসামির ছেলে মো. ছাগির আলম এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রেনচালক আসামি মো. আজম খান সেদিন কোর্টে থাকা এক পুলিশকে বলছে- এ মামলার দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল, রইস উদ্দিন ও মো. জাফর আহমেদ নাকি তাদের কাছ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অনেক আসামিকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, এজাহার ও চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে দেন। এ ধরনের কথা আমি অনেকবার শুনেছি। আসামি পক্ষের লোকজন আফতাব উদ্দিন রুবেল, শহিদুল ইসলাম বাবু, আবুল কালাম আবু, জামশেদ উদ্দিন, নুরুল আলম ভুট্টোদের কাছ থেকে শুনেছি। শুধু তাই নয়, এ মামলার দুদকের প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা রইস উদ্দিন আহমেদের ঘুষ নেয়া সম্পর্কে দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল এবং তৃতীয় তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ আমাকে দুদকের অফিসে প্রায়শ বলতেন। দুদকের এ দুজন কর্মকর্তা বলতেন-“রইস উদ্দিন আসামিদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে আপনার মামলার অনেক কাগজপত্র জব্দতালিকা থেকে ছিড়ে ফেলেছেন। গোপন করেছেন। হ্যা, তাদের সাথে আমি একমত।


আমি আমার দরখাস্তে অভিযোগ করেছি ২৫জনের অধিক। ৯, ১০, ১১নং প্লটের যাবতীয় কাগজপত্রে যাদের সিল-ছাপ্পর, স্বাক্ষর ও সম্পৃক্ততা পেয়েছি তাদেরকে অভিযুক্ত করেছি। ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি দলিল, ভুয়া লিজ দলিলসহ আরও একাধিক দলিলে যারা লিখিত ভুয়া সাক্ষী দিয়েছেন তাদেরকেও অভিযুক্ত করেছি। ভুয়া দলিল লেখক ও মুসাবিদাকারকদেরকেও অভিযুক্ত করেছি। পাহাড়তলী সাব- রেজিস্ট্রার মো. মজির উদ্দিনকেও অভিযুক্ত করেছি।


মুরাদ খান ও মিন আরা বেগম যদি ভুয়া আবেদনকারী ও ভুয়া বরাদ্দগ্রহীতা হয়Ñতাহলে তারা কিভাবে আসামি আজম খানকে (চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রেনচালক) আমমোক্তার বানিয়ে পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সৃজন করে দিবে? ভুয়া আবেদনকারী ও ভুয়া বরাদ্দগ্রহীতারা কী পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সৃজন করে দিতে পারে?
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন, মামলার এজাহার ও চার্জশিট অনুযায়ী ৯ নং প্লটের বরাদ্দগ্রহীতা মো. মুরাদ খান। ১০ নং প্লটের বরাদ্দগ্রহীতা মিন আরা বেগম থেকে আমমোক্তার মূলে নেয়া পাওয়ার অব এটর্নি দলিল যদি ভুয়া হয় সেখানে আসামি আজম খান কিভাবে চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া লিজ দলিল, ভুয়া হস্তান্তর পত্র দলিল ও ভুয়া রূপান্তর দলিল সৃজন করে ৯ ও ১০নং প্লটের মাস্টারমাইন্ড বহদ্দারহাট খাজা রোড এলাকার ক্রিমিনাল আলহাজ নাজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী সৈয়দা রওশন আরার কাছে বিক্রি করবে? এ সব দলিল যদি ভুয়া হয় তাহলে তখন চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং চট্টগ্রাম আদালতে পাহাড়তলী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তারা যদি দুর্নীতি-অনিয়ম করার কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়-তাহলে দুর্নীতিবাজ বর্তমান দখলদার আলহাজ নাজিম উদ্দিন বাদ যাবে কেন? সে মূল আসামি নয় কী? যাকে আমি সবসময় এ জাল-জালিয়াতি চক্রের মাস্টারমাইন্ড বলি। দাড়ি রাখা শয়তান নাজিম আট বছর ধরে খাজা রোড এলাকায় মসজিদ-মাজার নিয়ে ভালো ধর্ম ব্যবসা করছে!
মূল কথা হলো- রইস উদ্দিন তার তদন্ত প্রতিবেদনে শুধু অভিযুক্ত আলহাজ নাজিম উদ্দিন নয়; চট্টগ্রাম হাউজিং অফিস এবং পাহাড়তলী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কাউকে আনেনি। একইপথ অনুসরণ করেছে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল এবং মো. জাফর আহমেদ। আমি বলবো-এটা দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের মহাদুর্নীতি। আমি আমার পিতা এবং আমার অধিকার আদায়ের জন্য কষ্ট করে দুদকে অভিযোগ করেছি; আর আমার অভিযোগককে কেন্দ্র করে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা, অফিসে থাকা দুদকের লোকজন এবং আদালতে থাকা দুদকের লোকজন আঙুল ফুলে কলা গাছ হবে--ভালো টাকা কামাবে তা হতে পারে না।

 
দুদকের কর্মকর্তা বছির উদ্দিনের কথা মনে আছে? তিনি তো পুলিশের এক আইজি থেকে ঘুষ নিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। তার ঘুষ নেয়ার কথা মোবাইলে রেকর্ডও হয়েছে। কাজেই আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আপনারা কোন কোন আসামি, ভুক্তভোগী এবং আমার আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলেছেনÑতার কল রেকর্ড কি গোয়েন্দাসংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের কাছে নেই? র‌্যাবে কাছে নেই? আছে। তারা চাইলে এগুলো অনুসন্ধান করে নিয়ে আসতে পারে। কাজেই সাধু সাবধান। দুদক এবং পুলিশকে বলছি, টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো ভুক্তভোগীর মামলা ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। যদি কারো ক্ষতি করেন একসময় আপনিও দুর্নীতি-অনিয়মের জালে পড়বেন। তখন সরকারি চাকরি হারাবেন। বেতন-বোনাস সবই হারাবেন। আমার ক্ষতি হলে আমি অভিযোগ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।


২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার দুপুর দুইটার সময় আমার মামলার প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল আউয়ালকে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মো. মুছা কাটগড়ায় সাক্ষী দেয়ার জন্য ডাকলে তিনি যান। সেদিন বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ তাঁর কাছে প্রথমে নাম, সংস্থার পদবী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অনায়সে বলেন। এরপর বিচারক আবদুল মজিদ স্যারÑআবদুল আউয়াল সাহেব থেকে জানতে চাইলো- “আসামিদের নাম বলেন?”


আবদুল আউয়াল সাহেব বললেন, “এম সাদেক হোসেন।”


বিজ্ঞ বিচারক তাঁকে নামের ফাঁকে একটা প্রশ্ন করলেন-- “এম সাদেক হোসেন কি সরকারি কর্মকর্তা?”


আবদুল আউয়াল সাহেব বললেন, “হ্যা, স্যার। সরকারি কর্মকর্তা।”


২ নং আসামি হলো মো. আজম খান।


বিজ্ঞ বিচারক আবারো তাঁকে নামের ফাঁকে একটা প্রশ্ন করলেনÑ “ আজম খান কি পাবলিক না সরকারি কর্মকর্তা?”


আবদুল আউয়াল সাহেব বললেন,  “পাবলিক”।


৩ নং আসামি জানে আলম। তিনি পাবলিক।


তবে আবদুল আউয়াল সাহেব ৪নং আসামি শৈলেন চাকমার কথা বলেনি। তিনি চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিম্নমান সহকারী কাম ডাটা এন্টি অপারেটর। ২ নং আসামি আজম খানের সঠিক তথ্য গোপন করেছেন। যা তিনি নিজে জানে। আসামি আজম খান চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি করে।


সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় আবদুল আউয়ালকে জিজ্ঞেস করলো--এটা কিসের মামলা?” জবাবে আবদুল আউয়াল সাহেব বলল, “ চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ফিরোজশাহ হাউজিং এস্টেটের ৯, ১০ ও ১১নং প্লট দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ হয়েছে; তার মামলা। ” মামলা করেছেন তিনি অথচ বলতে পারছে না! যা হাস্যকর এবং রহস্যজনক!
বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় আবারো আবদুল আউয়াল সাহেবের কাছে জানতে চাইলোÑ “কারা আত্মসাৎ করেছে?” জবাবে আবদুল আউয়াল সাহেব বলল, “চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে আসামিরা প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি করেছে।” কিন্তু তিনি এখানে আসামিরা কাদের যোগসাজশে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতি করেছে; তা বিস্তারিত বলতে পারছে না।


বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় আবারো তাঁর কাছে জানতে চাইলো-- “ কাদের যোগসাজশে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি হয়েছে?” তিনি আবারো বলতে পারছে না। তোতলাচ্ছে। তখন এজলাসে থাকা বিভিন্ন মামলার বাদি, আসামি, আইনজীবীরা হাসাহাসি করছে। তারা বলছেÑতিনি যদি তদন্ত করেন, মামলা দায়ের করেন; তাহলে বলতে পারবে না কেন? নাকি আসামিরা টাকা দেয়ার কারণে তিনি সব ভুলে গেছে।
এরপর বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় তাঁর কাছে জানতে চাইলো-- “ আসামিদের বিরুদ্ধে আপনি কত কত ধারায় মামলা করেছেন?”

এবার দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল সাহেব বিচারকের দিকে হ্যা করে তাকিয়ে আছেন। কিছু বলতে পারছে না। চিন্তা করেন দুদকের আবদুল আউয়াল সাহেব নামের এ ভদ্রলোক দুদকে ৩৫ বছর চাকরি করেছে কিন্তু দুদকের মামলার ধারাগুলো বলতে পারেেছ না। অথচ দুদকের মামলার ধারাগুলো তাঁর মুখস্থ তটস্থ থাকার কথা! তিনি না হলে এ ৩৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে দুদকের দুইশো মামলা করেছে। কাজেই আবদুল আউয়াল সাহেবের আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুদকের ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ ২নং আইনের ৫ ধারা মনে থাকবে না! তা কী বিশ্বাসযোগ্য? কিছুতেই না। এখানে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের সাথে আসামিদের যোগসাজশ আছে। তাদের সাথে টাকা-পয়সার একটা লিঁয়াজো হয়েছে।


এরপর বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় আবদুল আউয়াল সাহেবের কাছে জানতে চাইলোÑ “ মামলা তদন্তকালে আপনি কি কি ধরনের আলামত জব্দ করেছেন?” তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল কিছুই বলতে পারছে না। শুধু আমি আমি করছে। বিচারক স্যার তাকে দিল এক জারি।


এবার বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় তাঁর কাছে জানতে চাইলোÑ “ অনুসন্ধানকালে আপনি কি কি পেয়েছেন?”

তিনি আবারো কিছু বলতে পারছে না। বিচারক স্যার তাকে দিলো আবারো জারি। আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য তাকে অপমান করলো। বিচারক আবদুল মজিদ স্যার বলল, “ মামলা করেছেন অথচ আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে পারছেন না ?”

ব্যাপার কী? নামেন!
আউয়াল সাহেব কাটগড়া থেকে নামছে না। স্যার আবারো বলল, “নামেন। নামেন।” আসলে তাঁর এটা প্রাপ্য ছিল। আবদুল আউয়াল সাহেব প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নয়। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছেন রইস উদ্দিন আহমেদ। যে কারণে অনুসন্ধানকালে কি কি পেয়েছেন বলতে পারছেন না।

আমার এ মামলা নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। হচ্ছে। অতীতেও আমার আব্বার সাথে আসামিরা অনেক যড়যন্ত্র করেছে। আমি ধারণা করছি ভূমিদস্যু আবুল কালাম আবু এবং রইস উদ্দিনের ভালো সর্ম্পক রয়েছে। দুর্নীতিবাজ এ আবুল কালাম আবুর মাধ্যমে আবদুল আউয়াল সাহেবের সাথে আদালতে সাক্ষ্য ভালোভাবে না দেয়ার জন্য কোনো লেনদেন হয়েছে। তা না হলে আউয়াল সাহেব এতা নাটক করবে কেন? দুদকের সমস্ত মান-সন্মান আউয়াল সাহেবেরা নষ্ট করছেন। আগামী তারিখ আবারো সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে। আমার উকিল এবং পিপি তাকে বলে দিয়েছেন আগামী তারিখ আপনি তদন্ত রিপোর্ট, মামলার এজাহার ও চার্জশিট ভালো করে পড়ে আসবেন। দুদককে আর ছোটো করবেন না। দুদককে আর প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। দুদককে প্রশ্নবিদ্ধ করলে হয়তো আপনার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হতেও পারে আসামিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন কিনা?


একইদিন সকালে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষী দিতে দুদক প্রধান কার্যালয় ঢাকা, সেগুন বাগিচা থেকে এসেছেন উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর। সেদিন তিনি বিজ্ঞ বিচারক আবদুল মজিদ স্যারের আদালতে সাক্ষী দেয়ার জন্য ঠিক দুপুর বারোটায় কাটগড়ায় যান। মো. আলী আকবর ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মচারী মো. রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারি’র বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছেন। তখন তিনি দুদক, সজেকা-১ এর সহকারী পরিচালক ছিলেন।


মো. আলী আকবর সাহেবের সাক্ষী নেয়ার সময় বিচারক তাঁকে প্রশ্ন করেন আপনি তদন্তে পেয়েছেন ৪৫ লাখ টাকা কিন্তু রেকর্ডে আছে ৪৩ লাখ টাকা।
কিভাবে পেয়েছেন বলেন? তখন জজ স্যারের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ আসামি তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করার সময় দায় দেখিয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আলী আকবর সেসময় তদন্ত করে আসামি রফিকুল ইসলামের জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ পেয়েছেন ৪৫ লাখ টাকা।”
এরপর বিচারক স্যার দুদকের আলী আকবর সাহেবকে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলÑএর কিছু উত্তর তিনি দিতে পেরেছেন আর কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। কারণ, উত্তর দিতে তিনি বারবার আটকে যাচ্ছেন। যার ফলে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা হাসাহাসি করছেন তাঁকে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিয়ে। আমি সেদিন আদালতে একেবারেই পেছনে বসেছিলাম। আমার পেছনে আসামি এবং পুলিশ তিলক ছিল। আসামি আমাদের দুজনকে বলছে তিনি নাকি তদন্তকালীন সময়ে ঘুষ চেয়েছেন!

এক সপ্তাহ পর আমি ঢাকা দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী আকবরকে মোবাইল করি এ বিষয়ে জানার জন্য। সাক্ষাৎকারে প্রথমে জানতে চাইলামÑআসামি মো. রফিকুল ইসলামের বাড়ি কোথায়?
তিনি জানালেন, “চাঁদপুর।”
এখানে থাকে কোথায়?
“হালিশহর বড়পুল এলাকায়। সে ওই এলাকায় বাড়ি করেছে। ওই বাড়ি করার সময় সে সিডিএ থেকে অনুমোদন নিয়েছে চারতলা কিন্তু করেছে ৬তলা।”  
এরপর আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম সেদিন বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আপনি এবং আবদুল আউয়াল সাক্ষী দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন কেন?
“আউয়ালের জবাব আউয়াল সাহেব আপনাকে দিবে! আমি ব্যর্থ হলাম কই?”
ওই যে ৪৩ লাখ আর ৪৫ লাখ টাকার হিসাব!
“এর জবাব তো আমি বিচারক স্যারকে সাক্ষ্যগ্রণের সময় দিয়েছি।”
“ আসামি তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করার সময় দায় দেখিয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। আমি তখন তদন্ত করে আসামি রফিকুল ইসলামের জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ পেয়েছি ৪৫ লাখ টাকা।
 তিনি মামলা থেকে ক্ষমা এবং মার্জনা পাওয়ার জন্য ১/১১ তত্ত্বাবধায়কের সময় গঠিত হওয়া ট্রুথ কমিশনে যান। ট্রুথ কমিশনও তাকে ক্ষমা করেনি। ফলে মামলা আদালতে চলে আসে। ওই সময় ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ট্রুথ কমিশন গঠন করেছিল দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যাতে দুর্নীতি করে মার্জনার মাধ্যমে ক্ষমা পায়। এ নিয়ে দেশে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় পরে ট্রুথ কমিশন বিলুপ্ত হয়ে যায়।”
এরপর তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তদন্তকালীন সময়ে আপনি আসামির কাছে ঘুষ দাবি করেছেন?
তিনি বললেন, “না”।


- লেখক, সংগঠক ও সাংবাদিক

 

 

রিলেটেড নিউজ

তরুণ প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ‌‌প্রশিক্ষণ কর্মশালার সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন

চট্টলার ডাক ডেস্ক: তরুণ প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ‌‌'সৃজনশীল প্রকাশনা খাত: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা' শীর্�...বিস্তারিত


মুসা (আ.) এর আমলে দীর্ঘদিন বৃষ্টি বন্ধ ছিলো!

মো. ইউছুফ চৌধুরী হযরত মুসা (আ.) এর আমলে দীর্ঘদিন যাবত বৃষ্টি বন্ধ ছিলো। তাঁর উম্মতরা তাঁর কাছে এসে বললো “ হে নবী, আল্�...বিস্তারিত


আল-আমিন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড

চট্টলার ডাক ডেস্ক: আল-আমিন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড ৮৩০, জাকির হোসেন রোড, একে খান মোড়, উত্তর পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। ...বিস্তারিত


চট্টগ্রামের একে খান মোড়ে রাজমহল রেস্তোরাঁ এন্ড বেকার্সের উদ্বোধন

চট্টলার ডাক ডেস্ক: নগরীর একে খান মোড়ে সুপার রাজমহল রেস্তোরাঁ এন্ড বেকার্সের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছ। সোমবার, ২৯ �...বিস্তারিত


আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি

আফছার উদ্দিন লিটন: অধ্যক্ষ শামসুদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধ...বিস্তারিত


ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমরা পদে পদে টের পাচ্ছি

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক লায়ন একে জাহেদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র। অত্যন্ত বিনয়ী এবং সাংস্কৃতিকবান্ধব এ�...বিস্তারিত