আজ  বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫


ইলন মাস্ক : প্রচলিত ধারণার বাইরে...

  চট্টলার ডাক ডেস্ক:   |   আপডেট: ০৭:৪৪ পিএম, ২০২৩-০৪-২৯    546

 

ইলন মাস্ক : প্রচলিত ধারণার বাইরে...

১৭ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাড়ি জমান কানাডায়। সেখান থেকে পড়তে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। তবে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে বুঝলেন ডিগ্রি তাঁর কোনো কাজেই আসবে না, নিজে নিজেই কিছু করতে চান।
ঝাঁকের মাছ নন বলেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিইচডি করার বদলে ‘ইন্টারনেট বুমিং’ জমানার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন। পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে নামের আগে ‘ড.’ বসানোর লোভ ত্যাগ করে শুরু করলেন নিজের স্টার্টআপ।

তাঁর কাছে উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনার গুরুত্বই বেশি। মাস্কের মতে, ডাটা ডাউনলোড করে অ্যালগোরিদমের কাজ করার নামই শিক্ষাব্যবস্থা। মুখস্থ বিদ্যায় ভরসা নেই বলে নিজের ছয় ছেলের জন্য স্পেসএক্সের ভেতরেই তৈরি করেন এডএস্ট্রা একাডেমি।
সেখানে হাতে-কলমে কাজ শেখে তাঁর ছেলেরা। তাদের পড়া শেষ বলে স্কুলও বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এডএস্ট্রা থেকে জন্ম নিয়েছে অনলাইন স্কুল ‘এস্ট্রা নোভা’। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী যে কেউ এতে ক্লাস করতে পারে। সপ্তাহে এক দিন সাড়ে সাত হাজার ডলারের বিনিময়ে শিখতে পারে ভিন্ন কিছু।

পেপাল বিক্রি করে বানালেন রকেট

ইলন মাস্ক নিজেও শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করেননি। পেলসিনভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও পদার্থে স্নাতক করেছিলেন। রকেট সম্পর্কে খুব বেশি জানতেন না। বই পড়ে এবং রকেট বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে রকেটের খুঁটিনাটি জানতে শুরু করেন। পেপাল বিক্রির ১৭৫.৮ মিলিয়ন ডলারের অর্ধেক খরচ করেন রকেট নির্মাতা কম্পানি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠায়।
অর্ধেক টাকা রকেট তৈরিতে খরচ করে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই মানুষের মনে প্রশ্নটা এলেই পারে―সব বাদ দিয়ে কেনো রকেট বানাতে গেলেন। রকেটের বদলে আবাসন ব্যবসায় টাকা খাটালেই বরং তাঁর জীবন হতো সহজ। রকেট তৈরির পেছনের কারণটা বেশ অবাক করার মতো।

এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, ২০০১ সালে নাসার ওয়েবসাইট দেখে জানতে পারেন চাঁদে মানুষ পাঠাচ্ছে না তারা। অদূর ভবিষ্যতেও মহাকাশে মানুষ পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই নাসার। মঙ্গল তো বহু দূরের ব্যাপার। ইলনের মনে হলো, নাসা যখন কাউকে পাঠাচ্ছে না তিনিই রকেট বানিয়ে মানুষ পাঠাবেন।

১৯৬৯ সালে চাঁদে পা রাখার পর স্বাভাবিকভাবেই ২০১৩ সালে মানুষ মঙ্গলে যাওয়ার কথা ভাববে। এমনটা ধরে নিয়েই ২০০৬ সালে বানাতে শুরু করলেন স্পেসএক্সের প্রথম রকেট ‘ফ্যালকন ১’। খরচ হলো ৬০ লাখ ডলার। সে সময় একই ধরনের অন্যান্য রকেটের দাম ছিল আড়াই কোটি ডলার। এখন তিনি স্পেসএক্সের চিফ ইঞ্জিনিয়ার। এবং তিনি যে রকেট বানানোর জন্য যোগ্য ব্যক্তি তার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন। রকেট শুধু তৈরিই করেননি, কিভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট বানিয়ে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা যায় সে পথও দেখিয়েছেন।

টেসলার জন্য সোফায় ঘুমিয়েছেন টানা তিন বছর-

স্পেসএক্সের পর বাকি সময়টা তিনি টেসলাকে দিয়েছেন। ২০১৭ সালে টেসলা মডেল ৩ গাড়ির উৎপাদন জটিলতায় প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছিল। সে সময় নেতৃত্ব দিয়ে নিজেই টেসলাকে বাঁচিয়েছেন দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে।

টেসলার প্রধান হিসেবে কর্মীদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন কোম্পানির দুঃসময়ে তাঁর অবস্থা অন্য সবার চেয়ে বেশি শোচনীয়। তাই বাড়িতে বা হোটেলে না গিয়ে অফিসের সোফায় ঘুমিয়েছেন টানা তিন বছর (২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত)। নিজের ব্যক্তিগত জীবন ভুলে সপ্তাহে গড়ে তিনি কাজ করেছেন ১২০ ঘণ্টা।
আজ টেসলা বিশ্বের অন্যতম সফল কম্পানি বলেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হয়েছেন তিনি। ৫০ বছর বয়সেই মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের চেয়ে দ্বিগুণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
শুধু প্রযুক্তি নয়, ব্যবসায় কিভাবে উন্নতি করতে হয় সেটাও তাঁর খুব ভালো করে জানা আছে। টেসলা গাড়ি বিক্রি করেই তিনি গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেন না। কোনো টেসলা গাড়ির মালিক টুইটারে কোনো ত্রুটির বিষয়ে লিখলে মাস্কের কাছে সেটাকে বেশ গুরুত্ব পায়। টেসলার প্রকৌশলীদের ত্রুটি সারানোর নির্দেশ দেন।

এতে গ্রাহক দাম নিয়ে টেসলা গাড়ি কিনে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। টেসলা গাড়ি থেকে কার্বন নিঃসরণ হয় না।  পরিবেশবান্ধব এই গাড়ি জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতেও ভূমিকা রাখছে।  

মহাশূন্যে পাঠাতে চান ৪২ হাজার স্যাটেলাইট-

টাকা জমিয়ে নিশ্চিন্ত জীবন বেছে নেননি। হাঙর ভরা সাগরে ঝাঁপ দিয়েছেন বারবার। সমুদ্রের নিচে কী আছে তা না দেখে ফেরত আসেননি। এ কারণে তাঁর রকেটে করেই এখন নাসার নভোচারীরা মহাকাশে যাচ্ছেন।
একই রকেটে করে মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে স্টারলিংক স্যাটেলাইট। মোট ৪২ হাজার স্যাটেলাইট পাঠানোর পর পুরো পৃথিবীকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের আওতায় আনা যাবে। কম খরচে আফ্রিকার বহু দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে। মঙ্গলগ্রহে মানুষও পাঠানো হবে ফ্যালকন রকেটে করে।

আছে নিউরালিংকও-
মানুষের কল্যাণে আরো একটি উদ্যোগ চালু করেছেন ইলন মাস্ক। তাঁর নিউরালিংক কোম্পানি এমন একটি চিপ তৈরি করছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ ঘটাবে। যা কিছুই চিন্তা করা হবে তা কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এর ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিও নিজের মনের কথা জানাতে পারবেন।

ভবিষ্যত নিয়ে হতে চান না হতাশ-
রকেট ও গাড়ি ছাড়াও, টানেল, স্যাটেলাইট, এআই চিপ, সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়েও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক। তাঁর মতে, মানুষ সবসময় ভাবে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু হবে। তবে এই ভালো কিছু কখনো এমনি এমনি হয় না।
 
মিসরের কারিগররা একসময় পিরামিড বানিয়েছিল। কিভাবে বানানো হয়েছিল সেই কৌশল কেউ মনে রাখেনি। তাই আর কোনো পিরামিড তৈরি করা যায়নি; সমানে এগনো যায়নি। প্রযুক্তিও সে রকমই একটি বিষয়।

কেউ কিছু উদ্ভাবন না করলে মানব সমাজের অগ্রগতি থেমে যাবে। ইলন মাস্ক বলেন, নিজেকে ত্রাতা মনে করেন বলে এত কিছু উদ্ভাবন করেননি; তিনি শুধু ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ হতে চান না।

#এইউ

রিলেটেড নিউজ

রওশন কার্পেট হাউজ

চট্টলার ডাক ডেস্ক: রওশন কার্পেট হাউজ ...বিস্তারিত


কিভাবে আপনার ফেসবুক আইডি সুরক্ষিত রাখবেন?

আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত


ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন তারা কী করবেন?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত


তুমি জেনুইন মিউজিশিয়ান তোমার চিন্তা কী?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্র...বিস্তারিত


পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি

চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি  “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত


সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র কসোভো

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত