আজ  শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪


বিশ্বকাপ জয়ে মেসির স্বপ্নপূরণ

  আফছার উদ্দিন লিটন:   |   আপডেট: ০১:০৪ এএম, ২০২২-১২-৩১    509

 

বিশ্বকাপ জয়ে মেসির স্বপ্নপূরণ

অবশেষে অধরা ট্রফি আর্জেন্টিনাই পেলো। আর্জেন্টিনার শৈল্পিক ফুটবল খেলার জয় হলো। ফুটবল হলো শৈল্পিক খেলা। ছন্দের খেলা। যেখানে তাল, লয়, মাত্রা সবই রয়েছে। আছে কৌশল। ফুটবল খেলার সাথে মানুষের জীবনের অপূর্ব এক মিল রয়েছে। সেটা হচ্ছে কে, কোন কৌশলে জীবন গড়ে তুলবে। কে, কোন কৌশলে ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে। এখানেই কৌশল মানে ট্র্যাকটিকসটাই আসল। কে, কোন কৌশলে খেলবে। এগুবে। তদ্রূপ খেলার ক্ষেত্রেও কৌশলটাই মুখ্য বিষয়। কে, কোন কৌশলে খেলবে কিংবা কে, কোন ফরমেটে (ছকে) খেলবে তা নির্ধারণ করে দলের প্রধান কোচ, সহকারী কোচ এবং অধিনায়কের সমন্বয়ে। সেটা হতে পারে ৪-৪-২ফরমেটে, হতে পারে ৪-৩-৩ ফরমেটে, কিংবা  হতে পারে ৫-৪-১ ফরমেটে।

আগেই উল্লেখ করেছি, ফুটবল হলো শৈল্পিক খেলা। আর এ শৈল্পিক ফুটবল খেলে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগাল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার সাপোর্টার বেশি। তা ওই দেশের কোচ এবং প্রেসিডেন্ট জানে। জানে তাদের দেশের জনগণ। মেসি বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ের দিন থেকে আর্জেন্টিনাতে এখন বাংলাদেশের পতাকা উড়ে। তাদের দেশের জনগণের মাঝে এখন 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ' স্লোগান মুখরিত হচ্ছে।

২০২২ সালের ৩০ মে আমি আমার একটি বাণীতে উল্লেখ করেছি-- “ক্রীড়া, সঙ্গীত, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে এক দেশের সাথে আরেক দেশের সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়-জাতি-বিজাতির ক্ষেত্রেও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।” ২০০৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমি আমার আরেকটি উক্তিতে উল্লেখ করেছি-“ বই, গান, ক্রীড়া, ভ্রমণ আর ফুলের সঙ্গে আমার প্রেম। এ যেনো এক উদ্ভট প্রেম।  যারা এই পাঁচটি বিষয়কে  ভালোবাসবে ; তারা কখনো সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, কালোবাজারী, মাদক ব্যবসায়ী, খেলার মাঠ দখলকারী, খাদ্যে ভেজালকারী, দুর্নীতিবাজ, ভুয়া রাজনীতিবিদ হতে পারে না।

কাতারে আর্জেন্টিনার একটি খেলা শেষে তাদের কোচকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিল বাংলাদেশে আপনাদের অনেক সাপোর্টার। এ নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?
তিনি প্রতি উত্তরে জানালেন, হ্যাঁ। আমারা তা অবগত আছি। এখানেই বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের জয়লাভ হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে বন্ধ থাকা আর্জেন্টিনার এমবাসি চল্লিশ বছর খুলতে যাচ্ছে দেশটি। এটাও একটা আর্জেন্টিনা সাপোর্টারদের কৃতিত্বের  কারণে হচ্ছে বলা যায়।

এবার আসি, ধর্মীয় এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের বিষয়ে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তারা বেশ উদার। সৌদি এবং আর্জেন্টিনার সরকারের অর্থায়নে সেখানে বহু বড় বড় মসজিদ নির্মিত হয়। আর তা সবই হয় প্রেসিডেন্ট কার্লোসের সময়ে। তিনি ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আরবীয় বংশদ্ভেূাত আরবীয় মুসলিম ছিল। সেদেশের পররাষ্ট্র নীতিমালা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নাকি  তাকে খৃস্টান হতে হবে। অন্যথায় প্রেসিডেন্ট হওয়া যাবে না। এখানে আমার দ্বিমত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হতে হলে তাকে ধর্ম ত্যাগ করতে হবে কেন? যাই হোক, পরে আবার তিনি মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে জানাজার মাধ্যমে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

আর বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ ভূমিদস্যুরা খেলার মাঠ দখল করে ১৫ তলা হাইরাইজড্ বিল্ডিং এবং কন্টেইনারের ডিপো তৈরি করে। যে কারণে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যু তৈরি হয়। চট্টগ্রামের হালিশহরে আবাহনী মাঠসহ অসংখ্য মাঠ দখল হয়েছে,  যার অধিকাংশ বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ক্ষমতাসীন দলের ভূমিদস্যুরা দখল করেছে। এ তালিকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষও রয়েছে। মজার বিষয় হলো চট্টগ্রাম শহরের যে মাঠগুলো দখল হয়েছে এর সবগুলো মাঠে আমি ফুটবল, ক্রিকেট খেলেছি। ফুটবল একটু বেশি খেলেছি। শৈশব থেকে আমি খেলতাম। কারণ, ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। চট্টগ্রাম নগরীতে যতগুলো খেলার মাঠ দখল হয়েছে তার একটি তালিকা রয়েছে আমার কাছে। ভবিষ্যতে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে ইংরেজিতে অভিযোগ পত্র লিখে পাঠানোও দোষের কিছু নয়। আমার কাছে স্পেশাল ক্ষমতা থাকলে খেলার মাঠ দখল নিয়ে অবিচার করার জন্য আলফা রিয়েল এস্টেটের নন্দন হাউজিং, বিশ^ কলোনি ব্রিকফিল্ড মাঠ, অলংকার একেখানের মাঠ, বাগদাদ কার্পেটের মাঠ, ভিক্টোরি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, কাট্টলি বুলু মিয়ার মাঠ, নাজির খানের মাঠ, আবাহনী মাঠসহ যতগুলো খেলার মাঠ দখল হয়েছে তা বুলডোজার চালাতাম। শিশু, কিশোর, তরুণদের খেলার মাঠ দখল নিয়ে ইতোমধ্যে আমি অনেক লিখেছি। তা বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ছাপিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও লিখবো।

এবার আসি, বাংলাদেশের ফুটবল খেলার প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের ফুটবল খেলা এখন অনেকটা নিস্প্রাণ। ঝিমিয়ে পড়েছে। খেলার মান নিম্ন পর্যায়ে-তা  ফিফা রেঙ্কিং দেখলে বোঝা যায়। আগে পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল খেলা হতো। প্রতিটি স্কুলে ফুটবল খেলা হতো, কলেজ পর্যায়ে হতো। ছোটো ছোটো ক্লাব পর্যায়ে হতো। শহর, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে খেলা হতো। খেলা হতো অনুর্ধ্ব ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ বছর বয়সীদের নিয়ে। আগে আবাহনী-মোহামেডানের খেলার একটা জৌলুস ছিল। মোনেম মুন্না, আসলাম, কায়সার হামিদ, কানন, আশরাফ উদ্দিন চুন্নু, সাব্বির, জুয়েল রানা, মাসুদ রানা, গাউস, বাদল রায়, পনির, আমিনুল, জনি, মামুন জোয়ার্দার, রূপু, রুমি, রক্সি, আরমান, নকিব, রকিবসহ আরও কতো খেলোয়াড়দের সাথে পরিচিতি ছিল আমাদের এবং তারও আগের প্রজন্মের সাথে। এখনকার প্রজন্মের অনেক ছেলরা এসব খেলোয়াড়দের নাম হয়তো সব জানবে না।
অবশ্য বাংলাদেশের খেলার মান নিচে নেমে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। শুধু দুর্নীতি, অনিয়ম নয়। মাঠ দখলও একটা বড় কারণ। প্রতি বছর বাফুফে ফিফা থেকে একটি ফুটবলের উন্নয়নের জন্য বাজেট পেয়ে থাকে; সেটা শুধু বাংলাদেশ নয় ফিফার সদস্যভুক্ত যতগুলো দেশ আছে তারা সবাই পায়। এতো গেলো ফিফার কথা। প্রতিবছর দেশের খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য সরকারি অর্থবছরের বাজেট থেকে একটা বড় অঙ্কের এমাউন্ট পায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ফুটবলের উন্নয়নের জন্য একটা বাজেট পায় বাফুফে। দেশের ফুটবল খেলার উন্নয়ন না করে বাফুফে দেশে-বিদেশের বাজেটের টাকা এবং অনুদান কি করে-আমি সেদিকে যাবো না। তবে, প্রত্যাশা করতে পারি ফুটবলের সে হারানো সুদিন আবার ফিরে আসবে। জয়তু ফুটবল। জয়তু আর্জেন্টিনা। জয়তু ফিফা। জয়তু আয়োজক কাতার।

লেখক ও সংবাদকর্মী

 

রিলেটেড নিউজ

তরুণ প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ‌‌প্রশিক্ষণ কর্মশালার সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন

চট্টলার ডাক ডেস্ক: তরুণ প্রকাশকদের অংশগ্রহণে তিনদিনব্যাপী ‌‌'সৃজনশীল প্রকাশনা খাত: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা' শীর্�...বিস্তারিত


মুসা (আ.) এর আমলে দীর্ঘদিন বৃষ্টি বন্ধ ছিলো!

মো. ইউছুফ চৌধুরী হযরত মুসা (আ.) এর আমলে দীর্ঘদিন যাবত বৃষ্টি বন্ধ ছিলো। তাঁর উম্মতরা তাঁর কাছে এসে বললো “ হে নবী, আল্�...বিস্তারিত


আল-আমিন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড

চট্টলার ডাক ডেস্ক: আল-আমিন হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেড ৮৩০, জাকির হোসেন রোড, একে খান মোড়, উত্তর পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। ...বিস্তারিত


চট্টগ্রামের একে খান মোড়ে রাজমহল রেস্তোরাঁ এন্ড বেকার্সের উদ্বোধন

চট্টলার ডাক ডেস্ক: নগরীর একে খান মোড়ে সুপার রাজমহল রেস্তোরাঁ এন্ড বেকার্সের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছ। সোমবার, ২৯ �...বিস্তারিত


আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি

আফছার উদ্দিন লিটন: অধ্যক্ষ শামসুদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধ...বিস্তারিত


ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমরা পদে পদে টের পাচ্ছি

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক লায়ন একে জাহেদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র। অত্যন্ত বিনয়ী এবং সাংস্কৃতিকবান্ধব এ�...বিস্তারিত