আজ  মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪


বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসুল(সা.) এর অনন্য ভূমিকা

  মো. ইউছুফ চৌধুরী   |   আপডেট: ১২:৪৮ এএম, ২০২২-১২-৩১    761

 

বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাসুল(সা.) এর অনন্য ভূমিকা

মানবাধিকার বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এ দুনিয়ায় মানুষ কতগুলো স্বতঃসিদ্ধ অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দেশ-কাল, বর্ণ-ভাষা ও জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জন্যই সে অধিকারগুলো সমভাবে প্রযোজ্য। সে অধিকারগুলোকেই বলা হয় 'মৌলিক মানবাধিকার'। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, সভ্যতার প্রায় উষাকাল থেকেই ক্ষমতা মদমত্ত শাসকগোষ্ঠী দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো অবলীলায় হরণ ও দলন করে চলেছে।


১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে 'মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা' নামে মানুষের জন্য কিছু অধিকার অর্থাৎ স্বাধীনতার অধিকার, সাম্য ও সমতার অধিকার, ধন-সম্পত্তির মালিকানা রক্ষার অধিকার এবং ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তারপরও বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনাবলী মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাকে কলংকিত করেছে। পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্রকে 'ভেটো' ক্ষমতা প্রদান করে জাতিসংঘ নিজেই সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকার খর্ব করেছে। সবল রাষ্ট্রগুলো অন্যের মানবাধিকারের লঙ্ঘনে সোচ্চার হলেও নিজেদের ব্যাপারে উদাসীন। মধ্যপ্রাচ্যসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের অবস্থাতো আরো করুণ।

ইসলামের আলোকে মানবাধিকারের নির্দেশনাঃ-

১. হযরত আদম (আ.) থেকে উদ্ভূত এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ সমগ্র মানবজাতি এক পরিবারের সদস্য। জাতি, গোত্র, বর্ণ, ভাষা, নারী-পুরুষ, ধর্ম বিশ্বাস, রাজনৈতিক মতবাদ, সামাজিক অবস্থান বা অন্য যে কোনো বিবেচনা নির্বিশেষে মূল মানবিক মর্যাদা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের দিক থেকে সকল মানুষ সমান। খাঁটি ঈমান ব্যক্তির মধ্যে মানবিক পূর্ণতা এনে দিয়ে এ মর্যাদা বৃদ্ধিকে গ্যারান্টি দেয়।

২. প্রতিটি মানুষ আল্লাহর অধীন। সেসব ব্যক্তিকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, যারা তার সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণে নিয়োজিত এবং শুধুমাত্র খোদাভীতি (তাকওয়া) ও সৎকর্মের ভিত্তিতেই একজন মানুষ অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে।  
মানবজাতি বা সকল মানুষের যে মৌলিক সমতা অর্থাৎ লিঙ্গ, জাতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভেদাভেদ না করে মতবাদ নির্বিশেষে সকলেই যে আল্লাহতায়ালার অধীন বান্দা এবং তারা মানুষ হিসেবে সমান-এ কথাটিই তাতে বলা হয়েছে।

৩. জীবন হলো খোদা প্রদত্ত একটি উপহার এবং প্রত্যেক ব্যক্তিরই জীবন ধারণের সুনিশ্চিত অধিকার রয়েছে অবমাননা থেকে রক্ষা করা। শরীয়াহ নির্দেশিত কোনো কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা হারাম বা নিষিদ্ধ।

৪. এমন কোনো কাজ করা বা উপায় অবলম্বন করা নিষিদ্ধ যা মানব জাতির ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৫. স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে (ঞবৎস ড়ভ ঃরসব রিষষবফ নু অষষধয) কারো জীবন রক্ষা করা শরীয়াহ নির্দেশিত একটি কর্তব্য।

৬. শারীরিক ক্ষতি বা নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার জন্যই সুরক্ষিত। একে নিশ্চয়তা দান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং শরীয়াহ নির্দেশিত কোনো কারণ ছাড়া এ অধিকার লঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ।

৭. মানুষের বিরোধ মীমাংসার জন্য কোনোরকম সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হওয়া যাবে না।

৮. যুদ্ধ যদি শুরু হয়েই যায় তাহলে যারা যুদ্ধরত নয় তাদের হত্যা করা যাবে না। বৃদ্ধ, মহিলা, শিশুদের হত্যা করা যাবে না। আহত এবং অসুস্থদেরকে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। যুদ্ধবন্দীদেরকে খাওয়ানো, আশ্রয় দেয়াসহ সব কিছু করতে হবে। মৃতদেহকে অবমাননা করা যাবে না। যুদ্ধবন্দী বিনিময় করতে হবে। বন্দী অবস্থায় তাদেরকে দেখতে দিতে হবে। ফসল নষ্ট করা যাবে না। গাছ কাটা যাবে না, সাধারণ জনগণের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা যাবে না।

৯. পরিবার হলো সমাজের ফাউন্ডেশন। পরিবারকে বিয়ের মাধ্যমে গঠন করা হবে। সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে বিবাহের পথে যত প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করা এবং তাকে সহজ করে দেয়া। পরিবারকে তার সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।

১০. মর্যাদা এবং তা ভোগ করার অধিকারের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের দিক থেকেও নারী-পুরুষ সমান। নারীর রয়েছে স্বতন্ত্র সামাজিক সত্তা বা পরিচয় ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং তার নিজের নাম ও বংশ পরিচয় বজায় রাখার অধিকার।

১১. পরিবারের ভরণপোষণ ও সার্বিক কল্যাণের দায়দায়িত্ব স্বামীর উপর বর্তাবে।

ইসলামের আলোকে মানবাধিকারের উপরোক্ত নির্দেশনা ১৯৯০ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে  "ঙওঈ : উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং রহ ওংষধস" নামে মানবাধিকার দলিল হিসেবে অনুমোদন করে।

নবী মুহাম্মদ সা. এর পুরো জীবনই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তঃ-

প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজের জীবদ্দশায় মানুষের সম্মান ও অধিকার তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিশোর বয়সে তিনি (সা.) 'হিলফুল ফুযুল' নামক সামাজিক সংগঠন কায়েম করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে যাত্রা শুরু করেন ১০ হিজরীর বিদায় হজ্বে আখেরী ভাষণের মাধ্যমে মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করে তা সমাপ্ত করেন। বিদায় হজ্বের ভাষণটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত কর্মীদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত উদ্বুদ্ধ করবে। মুহাম্মদ (সা.) দাশপ্রথাকে উচ্ছেদে নিজে স্বীয় দাস যায়েদ ইবনে হারেছ (রা.)কে মুক্ত করে সন্তানের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ঘোষণা করেছেন, "মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত। আবার “যে স্ত্রীর কাছে ভালো সেই প্রকৃত  ভালো।” তিনি (সা.) শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরী পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অমুসলিমদের অধিকার রক্ষায় বলেছেন "অমুসলিমদের উপর জুলুমকারীর বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন তিনি নিজে সাক্ষী দিবেন। মানুষের অধিকারকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, "সকল গুনাহ মাপ করলেও মানুষের অধিকার হরণের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেননা বলে ঘোষণা করেছেন। এভাবে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রত্যেকটি কথা ও কর্মে মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই আসুন আমরা পরস্পর পরস্পরের অধিকার রক্ষা ও সম্মান করার মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।

 

রিলেটেড নিউজ

রওশন কার্পেট হাউজ

চট্টলার ডাক ডেস্ক: রওশন কার্পেট হাউজ ...বিস্তারিত


কিভাবে আপনার ফেসবুক আইডি সুরক্ষিত রাখবেন?

আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত


ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন তারা কী করবেন?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত


তুমি জেনুইন মিউজিশিয়ান তোমার চিন্তা কী?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্র...বিস্তারিত


পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি

চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি  “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত


সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র কসোভো

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত