আজ  বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪


মানুষের প্রত্যাশার তুলনায় আয় বেড়ে গেলে তখন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়

  আফছার উদ্দিন লিটন:   |   আপডেট: ০৭:৩৭ পিএম, ২০২২-১০-১৮    1013

 

মানুষের প্রত্যাশার তুলনায় আয় বেড়ে গেলে তখন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়


সুজশ কান্তি বড়ুয়া। জনতা ব্যাংক লিমিটেডের  চাকতাই শাখার ব্যবস্থাপক। এর আগে দীর্ঘদিন কর্নেলহাট শাখায় ছিলেন।  তাঁর স্ত্রীও জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চট্টগ্রাম মিমিসুপার মার্কেট শাখার ব্যবস্থাপক। তিনি গণিতের উপর বিএসসি অনার্স এবং এমএসসি মাস্টার্স সম্পন্ন করেও ব্যাংকিং সেক্টরকে বেছে নিয়ছেন। তাঁর সাথে ব্যক্তিগত এবং ব্যাংকিং সেক্টরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারে আলোচনা করা হয়। সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু ধারণ করা হলো। যা থেকে পাঠকরা অনেক কিছু শিখবে--জানবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টলার ডাক পত্রিকার সম্পাদক আফছার উদ্দিন লিটন।


আফছার উদ্দিন লিটন: আপনার শৈশব কেটেছে কোথায়?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আমার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তর্গত জাফতনগর ইউনিয়নের কোঠেরপাড় বৌদ্ধ পল্লীতে।
        
আফছার উদ্দিন লিটন: আপনি পড়ালেখা করেছেন কোথায়?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ  থেকে  গণিত বিষয়ের উপর অনার্সসহ মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি।

আফছার উদ্দিন লিটন: বিএসসি (অনার্স) এবং এমএসসি (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেছেন; আপনি একজন গণিতের ছাত্র হয়েও ব্যাংকিং সেক্টর বেছে  নেয়ার গল্পটা বলবেন কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আসলে আমার জীবনের কিছু অদ্ভুদ ঘটনা আছে। যেমন আমি চট্টগ্রাম কলেজে পড়তে চেয়েছিলাম রসায়ন বিষয়ে কিন্তু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ভর্তি হলাম গণিত বিভাগে। চেয়েছিলাম শিক্ষক হতে। হয়ে গেলাম ব্যাংকার। তবে এখন ব্যাংকেই পুরো সময়টা সমর্পণ করছি। তবে ব্যাংকে যোগদান করার মূল ব্যাপারটা ছিল আমি যখন জিএমজি এয়ারলাইন্সে চাকরি করতাম, সেখানে যাত্রীদের সেবা দেয়া, রিজারভেশন করা ছিল মূল কাজ। বিশেষ করে ফ্লাইট দেরিতে ছাড়া বা আবহাওয়াজনিত কারণে ফ্লাইট স্থগিত হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতো; সেই থেকে আরো বেশি সংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেয়ার উপায় খুঁজি। এক্ষেত্রে ব্যাংকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান--যেখানে একসাথে প্রচুরসংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেয়া যায় এবং চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হয়।

আফছার উদ্দিন লিটন: আমি যতটুকু জানি, আপনার স্ত্রীও একই ব্যাংকের অন্য শাখার ব্যবস্থাপক। দুজন একসাথে ব্যাংকে চাকরি করে সংসার সামলান কিভাবে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আত্মত্যাগ এবং বিশ্বাস মানুষকে সুন্দর পথে পরিচালিত করে সেটা যতই দুস্কর কিংবা কন্টকাকীর্ণ হোক। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শাখা ব্যবস্থাপক হয়েও একে অপরের উপর বিশ্বাস এবং সংসার জীবনে বিভিন্নভাবে ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে আমরা একটি নৈতিক সংসার পরিচালনা করছি।

আফছার উদ্দিন লিটন: আপনি কখন জনতা ব্যাংকে যোগদান করেছেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আমি ২০১০ সালের জুন মাসে জনতা ব্যাংকে যোগদান করি।

আফছার উদ্দিন লিটন: এর আগে কোথায় ছিলেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: জনতা ব্যাংকে যোগদান করার পূর্বে বেসরকারি বিমান সংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্সে চাকরি করি।

আফছার উদ্দিন লিটন: আপনাদের ব্যাংকে গ্রাহকদের জন্য কি কি ধরনের লোন আছে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: জনতা ব্যাংক হচ্ছে সবশ্রেণির মানুষের ব্যাংক। এখানে ১০ থেকে ৫০ কিংবা ৫০ থেকে ১০০ টাকা হিসাবধারী গ্রাহকের ঋণ, কৃষকের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ, চাকুরীজীবী ঋণ, সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা(ঈগঝগঊ)ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ (সিসি), এসএমই ঋণ, আমদানি ও রপ্তানি খাতের ঋণসহ বিভিন্ন ধরনের ঋণ আছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: সিসি লোন কী? এর সুবিধা কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: সিসি লোন হচ্ছে চলতি মূলধন (বাণিজ্যিক ঋণ)। এটি মূলত ছোট বড় যে কোনো ব্যবসায়ী ব্যবসায় চলতি মূলধন যোগান, বৃদ্ধি করার জন্য সহজে গ্রহণ করতে পারে। যেমন ধরুন একজন ছোট মুদী দোকানদার, চালের আড়তদার, তার ব্যবসার স্টক আছে, তার নিজস্ব কিছু স্থায়ী সম্পত্তি আছে--কিন্তু মূলধনের অভাবে ব্যবসা বড় করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে ব্যাংক তার ব্যবসার মূলধন বৃদ্ধিতে চলতি মূলধন হিসেবে সিসি (বাণিজ্যিক ঋণ) প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে তিনি তার দৈনিক বিক্রয় ওই হিসাবে জমা করতে পারেন এবং পাওনাদারদের চেকের মাধ্যমে কিংবা  নগদে পরিশোধ করতে পারেন।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশের ব্যাঙ্কিং লেনদেন কোনসালের বিধিমালায় পরিচালিত হচ্ছে--ব্যাংকের কোন কোন লোনের ক্ষেত্রে মর্টগেজ লাগে; আর কোন কোন লোনের ক্ষেত্রে মর্টগেজ লাগে না?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বাংলাদেশের ব্যাংকিং লেনদেন সাধারণত ব্যাংক কোম্পানি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। যা সাধারণত বাণিজ্যিক ঋণ যেমন সিসি (প্লেজ), সিসি (বা.), সরকারি গৃহনির্মাণ, ফ্ল্যাট ঋণ, বিএমআরই, প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে মর্টগেজ প্রয়োজন। ছোট ছোট এসএমই ঋণ, মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে মর্টগেজ প্রয়োজন হয় না।

আফছার উদ্দিন লিটন: দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কয়টি?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেশে মোট রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ৪টি। যেগুলো হলো-সোনালি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, এবং রুপালি ব্যাংক লি.।

আফছার উদ্দিন লিটন: দেশে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক কয়টি?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেশে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক দুটি। কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এ ব্যাংক দুটি তৎকালীন সরকার দেশের কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য করেছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: বেসিক ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংক লি.--এ দুটি কোন ধরনের ব্যাংক?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: এ দুটি ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংক। তবে, বেসিক ব্যাংক একসময় সরকারি রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংক ছিল। পূবালী ব্যাংকও একসময় সরকারি রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংক ছিল। পরে সরকার এটিকে বেসরকারি ব্যাংকে নিয়ে যায়। ট্রাস্ট ব্যাংক একটি বেসকারি ব্যাংক। এ ব্যাংক সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। সীমান্ত ব্যাংক বিজিবি নিয়ন্ত্রণ করে। কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড--বাংলাদেশের একটি তালিকাভুক্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট এই ব্যাংকটি পরিচালনা করে।

আফছার উদ্দিন লিটন: স্বাধীনতার পূর্বে জনতা ব্যাংকের কি নাম ছিল? তখন মালিকানায় কে বা কারা ছিল?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: স্বাধীনতার পূর্বে জনতা ব্যাংকের নাম ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক। তখন পাকিস্তান সরকার--এর মালিকানায় ছিল।

আফছার উদ্দিন লিটন: এসএমই লোনের ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক এগিয়ে কেন? সরকারি ব্যাংকসমূহ এতো পিছিয়ে থাকার কারণ কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা লোন  যেটাকে আমরা এসএমই লোন বলি। এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক এগিয়ে থাকার কারণ হলো ব্র্যাক ব্যাংক মূলতঃ এসএমই ঋণনির্ভর ব্যাংক। তবে বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারি বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের পাশাপাশি এসএমই ঋণেও বিনিয়োগ করছে। মূলত, মনিটরিংয়ের কারণে সরকারি ব্যাংকের তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংক এগিয়ে।

আফছার উদ্দিন লিটন: সরকারি ব্যাংকে ঋণখেলাপীর সংখ্যা বেশি কেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: সরকারি ব্যাংকগুলো মূলত, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী হতে বিভিন্ন ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। ফলে এতে কিছু খেলাপী ঋণ পূর্বে থেকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাছাড়া দেশের উন্নয়নের স্বার্থে, অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করার জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো বৃহৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে--যেগুলো সময়ের পরিক্রমায় খেলাপী হওয়ায় ঋণ খেলাপির সংখ্যা বেশি।

আফছার উদ্দিন লিটন: সরকারি ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি বেশি হয় কেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: শুধুমাত্র সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ জালিয়াতি হয় না; সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকেই ঋণ জালিয়াতি হয়। তবে বর্তমানে দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ঋণ জালিয়াতির হার অনেকাংশে কমে গেছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের পর বেসরকারি ব্যাংকসমূহের দুর্নীতির পরিমাণ আপনার মতে বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি কমেছে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের পর কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক পরিবার কেন্দ্রীক হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক সমূহে দুর্নীতির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় কত?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশের কত শতাংশ মানুষের আয় ২ হাজার ৮শ' ২৪ ডলার?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার উঠলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিটেন্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের জনসংখ্যা দিয়ে মাথাপিছু ভাগ করে এ আয়ের হিসাব করা হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশের কত শতাংশ মানুষের আয় ৭শ' ৩০ ডলার?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: এ পরিসংখ্যান আমার কাছে জানা নেই।

আফছার উদ্দিন লিটন: কত শতাংশ রেমিট্যান্স জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: প্রায় ৩৭ শতাংশ রেমিট্যান্স জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসে।

আফছার উদ্দিন লিটন: রেমিটেন্সের ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর জনতা ব্যাংকে কী পরিমাণ রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে বা পাচ্ছে?
সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বাংলাদেশ সরকার বৈদেশিক রেমিটেন্সের উপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার পর রেমিটেন্সের পরিমাণ ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু জনতা ব্যাংকের শাখা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কাজেই রেমিটেন্সের উপকারভোগী জনতা ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে ২% প্রণোদনাসহ রেমিটেন্স উত্তোলন করতে পারে।

আফছার উদ্দিন লিটন: ভোগ্যপণ্যর দাম কমাতে জনতা ব্যাংক কি ভূমিকা রাখতে পারে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: ভোগ্যপণ্যর দাম কমাতে জনতা ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক সর্বনিম্ন হারে এলসি খোলার মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভূমিকা পালন করে আসছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: সরকারি ব্যাংকে গ্রাহকের টাকা রাখলে ঝুঁকি আছে কিনা?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্তভাবে গ্রাহক সরকারি ব্যাংকে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সঞ্চয় রাখতে পারে।

আফছার উদ্দিন লিটন: দারিদ্র্য বিমোচন  দূরীকরণে জনতা ব্যাংকের এসএমই লোন কতটুকু কার্যকর?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: জনতা ব্যাংক হচ্ছে আপামর জনসাধারণের ব্যাংক। জনতা ব্যাংক বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন সেবাসমূহ জনগণের দারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। জনতা ব্যাংক-কৃষক, দিন মজুর, শ্রমিক, ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশের এসএমই লোনের কত শতাংশ জনতা ব্যাংক দিয়ে থাকে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বাংলাদেশের এসএমই ঋণের ৩০-৪০% জনতা ব্যাংক বাংলাদেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীর নিকট বিতরণ করে থাকে।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশের ব্যাংকের গ্রাহকরা মনে করে কাজের গতি সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংকে বেশি। এর কারণ কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বর্তমান মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও ডিজিটাল যুগে সরকারি ব্যাংকের সেবা অনেক আধুনিক ও তথ্যনির্ভর। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন, ব্যাংকের সেবাসমূহ অতিদ্রুত জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারি ব্যাংক তথা জনতা ব্যাংকের প্রত্যেকটি শাখায় তরুণ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপক পদায়ন করে থাকেন। কাজেই এখন সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংকে কাজের গতি বেশি এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

আফছার উদ্দিন লিটন: বেসরকারি খাতের ৮টি ব্যাংক ও ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্ব একটি শিল্প গ্রুপের হাতে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তরা আগের মতো উক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ পাচ্ছে না।  এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বেসরকারি খাতের ৮টি ব্যাংক ও ৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্ব একটি শিল্প গ্রুপের হাতে হলেও প্রত্যেকটি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে এমওইউ(গঙট) চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। ফলে ঝরহমষব ঊীঢ়ড়ংঁৎব ইড়ৎৎড়বিৎ ষরসরঃ এর বেশি ঋণ কোনো ব্যাংক চাইলেও বিতরণ করতে পারে না। কাজেই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন।

আফছার উদ্দিন লিটন: জনতা ব্যাংক লেনদেন ব্যতীত সরকারি আর কি কি সেবা জনগণকে দিয়ে থাকে?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বর্তমানে জনতা ব্যাংকের সেবার পরিধি আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি, আয়কর, ভ্যাট, লাইসেন্স ফি ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোনসহ অন্যান্য বিল বিনা কমিশনে গ্রহণ করে জনগণকে সেবা প্রদান করে থাকে।
        
আফছার উদ্দিন লিটন: জনতা ব্যাংকের খেলাপী ঋণের শতকরা কত শতাংশ?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: বর্তমানে জনতা ব্যাংকের খেলাপী ঋণ শতকরা ১১ শতাংশ।

আফছার উদ্দিন লিটন: ব্যাংক লোনের নীতিমালা অনুযায়ী যারা ধনী তারা ঋণ পায়। কিন্তু গরিবরা পায় না।  এটাতো অনিয়ম।  এমন বৈষম্য নিয়ে কি বলবেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: এটা অবশ্যই একটি ভুল ধারণা। ব্যাংকে এমন কোনো নীতিমালা নেই যেখানে শুধু ধনীরা ঋণ পাবে কিন্তু গরিবরা নয়। ব্যাংকের নীতিমালায় ধনী-গরিব সবাই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। বৈষম্যটা হলো যখন একজন শিল্পপতি কোন ইন্ডাস্ট্রি করার পরিকল্পনা করে তখন সেখানে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। ফলে ব্যাংক সেখানে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করে। ফলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয় অন্যদিকে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।


আফছার উদ্দিন লিটন: দেশের টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার কারণে দেশে দিন দিন দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ছে। এতে ধনী আরও ধনবান হচ্ছে ; অন্যদিকে গরিব আরও নিঃস্ব হচ্ছে। তাদের পকেটে এখন টাকা নেই। এ নিয়ে কী বলবেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে এটা দীর্ঘদিনের একটা রেওয়াজ চলমান। তবে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বিদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে। কাজেই বিদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা যখন দেশে ফেরত আসবে তখন ব্যাংকগুলো প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে।

আফছার উদ্দিন লিটন: বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর ৭৮০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। আপনার মতে  এটা বন্ধ করার উপায় কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেশের টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ করতে হলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন।

আফছার উদ্দিন লিটন: দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয় সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে-একটি হলো আমদানি -রপ্তানি ব্যবসা অন্যটি হলো হুন্ডি ব্যবসা। এ নিয়ে কি বলবেন?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: সরকারের কঠোর মনিটরিং ও মুদ্রানীতির কারণে বর্তমানে হুন্ডি ব্যবসা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া ফরেন রেমিটেন্স প্রেরিত অর্থের উপর ২.৫% নগদ প্রণোদনা দেয়ায় হুন্ডি ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে ও রপ্তানীকৃত পণ্যের দাম কম দেখিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার একটা প্রবণতা দেখা যায়।

আফছার উদ্দিন লিটন: এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার রোধ (আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা) কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব?


সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েস রোধ করা গেলে এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার রোধ করা সম্ভব।


আফছার উদ্দিন লিটন: টাকার অবমূল্যায়ন কিভাবে রোধ করা সম্ভব?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করতে হলে নিম্ন পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেÑ
                    ১। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ রাখা।
                    ২। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধি করা।
                    ৩। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা।
                    ৪। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি করা।
                    ৫। আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করা।

আফছার উদ্দিন লিটন: বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের মতে, সারাবিশ্বে ভবিষ্যতে  ডলারের  আধিপত্য থাকবে না। স্বর্নই হবে ডলারের বিকল্প। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেখুন, বর্তমান  বিশ্বে বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজার ব্যবস্থাপনা ডলারের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ডলারের ভিত্তিতে নড়েবড়ে করে দিয়েছে। কারণ রাশিয়া এখন রুবলকে শক্তিশালী করার জন্য রুবল ছাড়া তেল-গ্যাসসহ সেদেশে উৎপাদিত কোনো কিছু রপ্তানি করছে না। কাজেই স্বর্ণ হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে সঞ্চয়ের একটি আন্তর্জাতিক মাধ্যম কিন্তু আমদানি-রপ্তানির জন্য নয়। কাজেই ডলারের আধিপত্যের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রাও এখন শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

আফছার উদ্দিন লিটন: বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন ঝওইখ ব্যাংকের কর্মকর্তা। এগুলো বন্ধ করার উপায় কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেখুন, ব্যাংকের যে কোনো ইন্সট্রুমেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশ ছাড়া জালিয়াতি করা সম্ভব নয়। ক্রেডিট কার্ডও তেমনি একটি ব্যাংক ইন্সট্রুমেন্ট। ব্যাংকের প্রতি আস্থা রেখে গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে কার্ড জালিয়াতি রোধ করতে হলে ব্যাংকের আইটি সিস্টেমকে কঠোর গোপনীয়তায় রক্ষা করা, গ্রাহকের পাসওয়ার্ড কোনোভাবেই হস্তান্তর না করা, ব্যাংক কর্মকর্তাদের শুদ্ধাচার প্রয়োগ ও নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন না দেয়ার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

আফছার উদ্দিন লিটন: দেশে আইনের অভাব নেই। প্রতিনিয়ত আইন হচ্ছে। তারপরও আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: দেখুন, দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে আইন আছে। কিন্তু আইনের কোনো প্রয়োগ কিংবা প্রতিফলন আছে কী? টাকা হচ্ছে মধুর মতো। মধু যেখানে থাকে সেখানে যেমন পিপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি ছুটে যায়; তেমনি টাকার জন্য মানুষ দুর্নীতি করতে দ্বিধাবোধ করে না। আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো অপ্রাপ্তি, অসন্তোষ, চারিত্রিক বিপর্যয়। সেটা উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর সব জায়গায় বিদ্যমান।

আফছার উদ্দিন লিটন: সারা পৃথিবীর পাচার হওয়া টাকা সুইস ব্যাংকে রাখা হয়। অথচ, সুইজারল্যান্ডকে পৃথিবীর অন্যতম সভ্য দেশ বলা হয়?
সুজশ কান্তি বড়ুয়া:
মানুষের প্রত্যাশার তুলনায় আয় বেড়ে গেলে তখন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। তাই মানুষের সীমাতিরিক্ত অর্থ জোগানের স্বার্থে পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমা রাখে।

আফছার উদ্দিন লিটন: আমার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: ফেসবুকে আপনার লেখাগুলো দেখি। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত আপনার রিপোর্ট, ফিচার, আর্টিকেল ও সাক্ষাৎকার দেখি। আপনি একজন বহুমাত্রিক লেখক ও সাংবাদিক--এতে কোনো সন্দেহ নেই। আপনার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখা জনগণের উপকার বয়ে আনবে। বিশেষ করে আপনি ভূমিদস্যু এবং দুর্নীতিবাজদের নিয়ে ভালো লেখেন। আপনার বই তিনটি আমি পড়েছি--বইগুলোতে অনেক তথ্য-উপাত্ত এবং ম্যাসেজ রয়েছে। যা সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনেক কাজে আসবে।

আফছার উদ্দিন লিটন: আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

সুজশ কান্তি বড়ুয়া: আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার এবং আপনার পত্রিকার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। আপনার কাছ থেকে আরও কিছু ভালো বই আশা করছি। আপনার ক্ষুরধার লেখনি অব্যাহত থাকুক। ভালো থাকবেন।

 

 

রিলেটেড নিউজ

আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি

আফছার উদ্দিন লিটন: অধ্যক্ষ শামসুদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধ...বিস্তারিত


ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমরা পদে পদে টের পাচ্ছি

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক লায়ন একে জাহেদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র। অত্যন্ত বিনয়ী এবং সাংস্কৃতিকবান্ধব এ�...বিস্তারিত


পটিয়ার সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে সচেষ্ট রাখবো

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক আলহাজ্ব মোতাহোরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পটিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। চট�...বিস্তারিত


জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার প্রয়াস গ্রহণ করবো -- আলহাজ্ব দিদারুল কবির

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক ...বিস্তারিত


১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে

আফছার উদ্দিন লিটন ও এলেন ভট্টাচার্য অনিক এম এ লতিফ এম.পি। চট্টগ্রাম-১১ সংসদীয় আসনের এমপি। তিনি তিনবারের জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি একজন ব্যবসায়...বিস্তারিত


আমি হাটহাজারীর সকল ধর্মের সকল মতের মানুষের সাথে কাজ করতে চাই

আফছার উদ্দিন লিটন: মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী, আংশিক বায়েজীদ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁর �...বিস্তারিত