শিরোনাম
মোহাম্মদ হক | আপডেট: ০৯:৪৮ পিএম, ২০২২-০৯-১৩ 427
তখন খুব ছোট ছিলাম। বাবার আর্থিক সংগতি কম ছিল তদুপরি আমরা অনেকগুলো ভাইবোন। তাই ঈদে নুতন জামার প্রত্যাশা করতাম না। তবে ঈদের আগের রাত্রে ঈদের খুশীতে ঘুম আসতো না। ঈদের দিন খুব প্রত্যুসে ঘুম থেকে জেগে যেতাম। মায়ের নির্দেশে বাবার পিছনে ফজরের নামাজ আদায় করতাম। এরপর বিসে ভাই নারকেল ভাঙতো। বাঁশ এবং বেতের তৈরি বিশেষ পাত্রে মা মুড়ি আর গুড় দিতো। ফুফাত ভাই বিসে ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়িতে আমার মা-বাবার স্নেহ, মায়া-মমতায় বড় হয়েছে। আমরা তাকে বড় ভাই হিসেবে সম্মান করতাম।
ঈদের দিন সকালে বিসে ভাই কর্তৃক সদ্য ভাঙা নারকেলের শৈল্পিক শাঁস ছিল অপূর্ব স্বাদের। মুড়ি, গুড় আর নারকেলের শাঁস ছিল অমৃত সম। মাথায় সরিষার তেল দিয়ে এবং গন্ধমাখা তিব্বত সাবান নিয়ে ভাই-বোন সহ কিয়াম উদ্দিন দুলাভাইয়ের পুকুরে গোসল করতে যেতাম। গোসল শেষে পোশাক পরে বাড়িতে তৈরি সেমাই খেয়ে বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে যেতাম। বাবার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাই মোকারব এবং আমি ঈদের নামাজ আদায় করতাম। নামাজ শেষে বোনদের জন্য লাল ফিতা, কাঁচের চুড়ি, তিলের খাজা আর গুড়ের কদমা কিনতাম। আমরা দুই ভাই আমাদের খেলার জন্য কাঁচের মার্বেল কিনতাম। গ্রামের সকল বাড়ি থেকে আনা মুড়ি ও গুড় ঈদগাহের পাশে সবুজ চত্বরে বড় চাটাইয়ের উপর ঢেলে একটি বিশাল গুড় মুড়ির অপূর্ব টিলা তৈরি করা হতো।
বিসে ভাই আমাদের বাড়ি থেকে ধামায় করে আনা মুড়ি ও গুড় ওই মুড়ি টিলায় ঢেলে দিত। কিছু স্বেচ্ছাসেবী গুড় মুড়ি মিশাতো। ঈদগাহে আগত সকলে লাইন ধরে বসে পরতো। আমরা বাবা সহ গ্রামের মাতব্বরদের উপস্থিতিতে সকলের মাঝে গুড় মুড়ি বিতরণ করা হতো। সকলে বাঁশ ও বেতের তৈরি পাত্রে মিশ্রিত গুড় মুড়ি নিয়ে যার যার বাড়ি ফিরতো। বাসায় মা, দাদী,ভাই, বোন, বাবা সবাই মিলে অমৃত স্বাদের মুড়ি খেতাম। বোনেরা হাতে কাঁচের চুড়ি আর মাথায় রঙিন ফিতে পরতো। আমরা দুই ভাই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মার্বেল খেলতাম। বিকেলে বিসে ভাইয়ের সঙ্গে উলুর ক্ষেতে বা ফাঁকা মাঠে ঢাউস ও কোয়ারে ঘুড়ি উড়াতে যেতাম। শত শত ঘুড়িতে নীল আকাশ ছেয়ে যেতো। সে এক অপূর্ব মোহনীয় দৃশ্য। আমরা দুই ভাই নাটাই হাতে নিয়ে ঘুড়ির উচ্চতা দেখে মুগ্ধ ও কৃতজ্ঞ চোখে ঘুড়ি কারিগর বিসে ভাইয়ের দিকে তাকাতাম।
করোনাকালে একাকী আইসোলেশনে থেকে ছোট বেলার ঈদ গুলোর কথা মনে পরে গেল। যাদের সঙ্গে ঈদগাহ মাঠে যেতাম তারা আজ কোথায়? ইমিডিয়েট ছোট ভাই মোকারব ১৯৯০ সালে অকালে চলে গেলো। জীবন সংসারে বটবৃক্ষ বাবা ২০০৬ সালে আমার রাজশাহীর সরকারি বাসায় মা সহ এলো। সামান্য শারীরিক জটিলতা। কিছু পরীক্ষা করা হলে ডাক্তার জানালো ফুসফুস ক্যান্সার। রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে টানা ২০দিন চিকিৎসা চললো। একদিন ডাক্তার জবাব দিলো সময় শেষ। বাবা আমাদের এতিম করে চলে গেলো অচীনপুরে। ২০২০ সালে বিসে ভাই কবর দেশে মাটির বিছানায় চিরশয্যা নিয়েছেন। ২০২১ সালে ঈদের দিনে আমি একাকী আইসোলেশনে থেকে এলোমেলো নানা ভাবনার মাঝে হঠাৎ করেই ছোট বেলার ঈদকে খুঁজতে গিয়ে সত্যি নিজেকে একা খুঁজে পেলাম। হঠাৎ মনে হলো বারান্দায় গিয়ে ঢাকা কাঁঠাল বাগানের আকাশে ঘুড়ি আছে কিনা দেখা দরকার। না আকাশে কোনো ঘুড়ি নেই; শুধু সারি সারি প্রাণহীন গগন চুম্ভি দালান কোঠা। অজান্তেই দুচোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। চোখে থাকা চশমা ঝাপসা হয়ে গেলো। ওপারে ভালো থেকো আদরের ছোট ভাই মোকারব, বিসে ভাই এবং প্রিয় বাবা।
চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যে শব্দ গুলো প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহ�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের মানুষের আয় হ্রাস পাওয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জরিপ�...বিস্তারিত
আফছার উদ্দিন লিটন: সম্পাদকীয় ... আবরার হত্যা মামলায় আসামীদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কার্যকর হয়নি। ফেনীর নুসরাত হত্যা মামল�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: তুমি হৃদয় হাসান বাবু আমার একটা তুমি চাই, যেই তুমিতে প্রাণটা নাচে হাজার রঙ দেখতে পাই। আমার এক�...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: তুমি অবিনশ্বর আলেয়া চৌধুরী শুভ সুন্দর প্রত্যয়ে কোটি মানুষের হৃদয়ে কিংবদন্তি তাজ সংগ্রামে সাহস...বিস্তারিত
চট্টলার ডাক ডেস্ক: দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতি বাবুল কান্তি দাশ দ্রব্য মূল্যের ঊর্দ্ধগতি উদ্বিগ্ন সবাই, হা-হুতাশে স�...বিস্তারিত
© Copyright 2024 Dainik Chattalar Dak