আজ  বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪


নারীর উচ্চ শিক্ষার প্রসারে সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজ অনন্য ভূমিকা রাখছে

  আফছার উদ্দিন লিটন:   |   আপডেট: ১১:৩৬ পিএম, ২০২২-০৮-১৯    765

 

নারীর উচ্চ শিক্ষার প্রসারে সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজ অনন্য ভূমিকা রাখছে

সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজ। নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা। চট্টগ্রামের উত্তর জনপদের উচ্চনারী শিক্ষার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এগিয়ে যাচ্ছে  পৃথিবী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। এ এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ নারীর উচ্চশিক্ষা লাভ। তাই নারীর উচ্চশিক্ষার প্রসার একান্তভাবে অপরিহার্য। বিবর্তিত পৃথিবীতে দেশ ও সমাজকে অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াস অনস্বীকার্য। আর এ কাজটি করে যাচ্ছেন সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজ।  কিন্তু নারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে প্রযুক্তির অগ্রসরতার সাথে সাথে মানুষের মানবিক ও নৈতিকতাবোধের অবক্ষয় হওয়ার কারণে নারী অনেক ক্ষেত্রে এখনো অনিরাপদ। তাই ভালো কলেজ খোঁজে না পাওয়ার কারণে তারা হতাশ হয়। হতাশা থেকে মুক্তি পেতে তারা খোঁজে নিরাপদ কলেজ। যেখানে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়।


সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজের উৎপত্তি: ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এতদ্অঞ্চলের নারী শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান--যেটি সীতাকুণ্ড  বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালে একাদশ শ্রেণি খোলার মাধ্যমে সীতাকুণ্ড বালিকা স্কুল ও কলেজের যাত্রা শুরু করে। ২০১২ সালে  স্নাতক শ্রেণি চালুর মাধ্যমে সীতাকুণ্ড  বালিকা স্কুল ও কলেজ থেকে কলেজ শাখা পৃথকীকরণের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড  মহিলা (ডিগ্রি) কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট জাতীয়করণের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের পদযাত্রা শুরু হয়।


নারীর উচ্চ শিক্ষার প্রসারে সীতাকুণ্ড  সরকারি মহিলা কলেজের অবদান: চট্টগ্রাম শহর থেকে ফেনী পর্যন্ত প্রায় একশ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সীতাকুণ্ড  সরকারি মহিলা কলেজটি উচ্চ নারী শিক্ষার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম শহরের বাইরে এ মহিলা কলেজের পাসের হার সবচেয়ে বেশি। করোনার পূর্ববর্তী সময়ে সীতাকুণ্ডে এ কলেজের অবস্থান সার্বিক বিবেচনায় প্রথম স্থান ছিল। চলতি বছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সীতাকুণ্ড উপজেলায় এ প্রতিষ্ঠানটি শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫শ’ জন ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। বর্তমানে সীতাকুণ্ড  সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতক(পাস) লেভেল পর্যন্ত চালু আছে। তাই বুঝা যায় নারী শিক্ষার প্রসারে এই কলেজের অবদান কতটুকু।


কখন সরকারিকরণ হয় সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ: আগেই বলেছি, কলেজ শুরুর আগে এ অঙ্গনে সীতাকুণ্ড  বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল। ১৯৯৪ সালে এ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। তবে ওই সময় সরকারিকরণ হয়নি। সীতাকুণ্ড এলাকার মেয়েদের শিক্ষিত, সৎ, মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সহ সকল বিষয় বিবেচনা করে এতদঞ্চলে আলোকিত নারীর অবদানের পথকে আরো সুগম ও সুদূরপ্রসারী করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সদয় সম্মতিক্রমে এ কলেজকে জাতীয়করণের অনুমোদন দান করেন। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এ কলেজটি সরকারি হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কলেজটি সরকারি হলেও এখনো সরকারি বিধিবিধান চালু হয়নি। তাই ছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় অধ্যক্ষ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতার কারণে বেশি সংখ্যক ছাত্রী ভর্তি করানো যাচ্ছে না।


সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের পরিচিতি: লেফটেন্যান্ট মো. দিদারুল আলম। তিনি সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। একজন দক্ষ এবং যোগ্য অধ্যক্ষ। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম ১৪ বিএনসিসি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক। সদা হাস্যোজ্জ্বল সাদা মনের একজন মানুষ। যিনি নীরবে নিভৃতে একজন মানুষ গড়ার কারিগর। ১৯৯৪ সালে তিনি এই কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৯ সালের ২১শে জুলাই থেকে এ কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে সীতাকুণ্ড  উপজেলার ৪ নম্বর মুরাদপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে তিনি বৃত্তিপ্রাপ্ত ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন।


সীতাকুণ্ড  সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা: দীর্ঘদিন তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। তাঁর এই শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা বড়ই রোমাঞ্চকর। তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এরপর ১৯৮৭ সালে তিনি সীতাকুণ্ড  বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একমাত্র কমার্স টিচার (সহকারী শিক্ষক) হিসেবে যোগদান করেন। এই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে তিনি স্নাতকোত্তর ও বি.এড ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালে এই স্কুলে কলেজ শাখা চালু হলে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক হন। তিনি ২০০৪ সালে সহকারী অধ্যাপক এবং ২০১৯ সালে এই কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হন

অধ্যক্ষ হয়েও এখনো ক্লাস নেন তিনি: কলেজে অফিসিয়াল কাজের ঝামেলার মধ্যেও তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণিতে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস নিয়ে থাকেন। স্কুলে থাকাকালীন সময়ে তিনি সাধারণতঃ সাধারণ গণিত, ইংরেজি, বাণিজ্যিক গণিত ও হিসাব রক্ষণ এবং ভূগোলের ক্লাস নিতেন। ক্লাস নিতে তিনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

সীতাকুণ্ড সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার মান: এই কলেজের শিক্ষকদের ও শিক্ষার মান প্রশংসনীয়। কলেজ সৃষ্টির পর দ্বিতীয় ব্যাচে এই কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে একজন ছাত্রী বোর্ডের মেধা তালিকায় ৭ম স্থান অধিকার করে। ২০০০ সালে একই বিভাগ থেকে দুই জন যথাক্রমে ১৭তম ও ২০তম স্থান লাভ করে। এরপর ২০০২ সালে এই কলেজের একজন ছাত্রী মানবিক বিভাগ থেকে ১৩তম স্থান লাভ করে। এ ছাড়া এই কলেজের ছাত্রীরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর, চিকিৎসক, ভার্সিটি ও কলেজের শিক্ষক এবং প্রশাসন ক্যাডারে (ইউএনও) নিয়োজিত আছে।

করোনাকালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম: করোনাকালে প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ব্যত্যয় ঘটেনি এ কলেজের। ছাত্রীদের দীর্ঘদিনের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস চালু রেখেছিল। এ কারণে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৬.৫৪ শতাংশ।

লেখক ও সংবাদকর্মী

   
 

 

 

রিলেটেড নিউজ

রওশন কার্পেট হাউজ

চট্টলার ডাক ডেস্ক: রওশন কার্পেট হাউজ ...বিস্তারিত


কিভাবে আপনার ফেসবুক আইডি সুরক্ষিত রাখবেন?

আফছার উদ্দিন লিটন: ২০২১ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গণহারে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি রহ�...বিস্তারিত


ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন তারা কী করবেন?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ফুসফুসের রোগে যারা ভুগছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদেরকে সুখবর দিয়েছে ডান্...বিস্তারিত


তুমি জেনুইন মিউজিশিয়ান তোমার চিন্তা কী?

চট্টলার ডাক ডেস্ক: সত্তর দশকের শেষ দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম বিদেশ চলে যান। অনেকে এই শূন্য পদের জন্য আগ্র...বিস্তারিত


পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি

চট্টলার ডাক ডেস্ক: এটা হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম লাইব্রেরি  “ The British Library" যেখানে বইয়ের পরিমাণ প্রায় ১৭০ থেকে ২০০ মি...বিস্তারিত


সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র কসোভো

চট্টলার ডাক ডেস্ক: ইউরোপের বলকান অঞ্চলের স্বাধীন দেশ কসোভো (Republic of Kosovo)। এটি সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথি�...বিস্তারিত